|

নান্দাইলে পিতাই খুনি, পিতাই বাদী!

প্রকাশিতঃ ৮:২১ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ১১, ২০১৮

সৈয়দ নোমানঃ  ময়মনসিংহের নান্দাইলে কিশোর আব্দুল্লাহ সংগ্রাম (১৪) নৃশংসভাবে খুন হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। প্রথমে পানিতে চুবিয়ে এবং পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য শরীরের বিভিন্নস্থানে কুপিয়ে জখম। এরপর নিখোঁজের অভিনয়। সবশেষ অজ্ঞাত আসামি করে পিতা দুলাল মিয়ার (৩৮) মামলা। কিন্তু ছয় মাস ডিবি পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এলো পিতাই হত্যাকারী নিজ সন্তানের।

পুলিশ বলছে, নিজের তৃতীয় স্ত্রী এবং শ্যালককে ফাঁসাতেই এ হত্যাকান্ড বলে ১৬৪ ধারায় ইতিমধ্যে জবানবন্দীও দিয়েছে পাষণ্ড ওই পিতা। গত সোমবার দুলাল মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে ৪নং আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নয়ন চন্দ্র মোদকের কাছে এ জবানবন্দি দেন।

ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পরিমল চন্দ্র দাস জবানবন্দির উদ্বৃতি দিয়ে জানান, নান্দাইল থানার সুন্দাইল গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া। তার প্রথম স্ত্রীর ছেলে আব্দুল্লাহ সংগ্রাম। তাদের সংসার জীবনে বিচ্ছেদ হলে ছেলে সংগ্রামকে বাবার কাছে রেখেই চলে যান স্ত্রী। পরে দুলাল মিয়া ২য় বিয়ে করলে সে স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তীতে সুখিয়া আক্তার নামে আরেকজনকে বিয়ে করে দুলাল। কিন্তু ওই স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। এ নিয়ে উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা করে।

তিনি আরও জানান, দুলাল মিয়া তার সবশেষ স্ত্রী সুখিয়া ও তার ভাই শহিদুল এবং খালুর উপর প্রতিশোধ এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্যই তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান সংগ্রামকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে গত বছরের অক্টোবরের ১০ তারিখ রাত ৮টার দিকে ছেলেকে মাছ ধরার কথা বলে বাড়ির পাশে বেতাই নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে একটি খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়ে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে। নিশ্চিত হবার জন্য মৃতদেহের বিভিন্নস্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করে জখম করে। পরে সেখানেই মৃতদেহ রেখে এসে প্রচার করে ছেলে সংগ্রাম নিখোঁজ রয়েছে। পরদিন সকালে স্থানীয়রা সংগ্রামের মরদেহ দেখতে পেয়ে নান্দাইল থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে দুলাল মিয়া নিজেই বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে।

জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু ছিলনা বলেই ডিবিকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়। পরে ডিবির এসআই পরিমল চন্দ্র দাস মামলাটির মূল রহস্য উদঘাটন করেন এবং সোমবার ঘাতক পিতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিজ সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করে নেয়।

Print Friendly, PDF & Email