|

রাসিক নির্বাচনে বিএনপির সেই নেতারা আ‘লীগের পক্ষে কোণঠাসা বিএনপি

প্রকাশিতঃ ৩:৪৭ অপরাহ্ণ | জুলাই ২৯, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট , ভালুকার খবরঃ  রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বিএনপির অনেক নেতাও। মহানগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নেতা এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। এই ঘটনা বর্তমানে রাজশাহীতে আলোচনার অন্যতম বিষয়।

জানা গেছে, বিএনপির এসব নেতার অনেকেই গাড়ি পোড়ানো থেকে শুরু করে পুলিশের ওপর হামলাসহ নাশকতার বিভিন্ন মামলার আসামি। কেউ কেউ জেলও খেটেছেন। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বেশ কয়েকজন ছিলেন নগরীর ত্রাস এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে ‘সাক্ষাৎ যমদূত’। বিএনপির ডাকা টানা তিন মাসের অবরোধের সময় এঁরাই রাজশাহীকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিলেন। নাশকতার মামলা থেকে বাঁচতে তাঁরাই এখন নৌকার পক্ষে নেমেছেন পাড়া-মহল্লায়।

এর বাইরেও স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতা গ্রেপ্তার আতঙ্কে কিংবা অভিমানে হয় চুপ করে আছেন, নতুবা সিটি নির্বাচন এড়াতে ঢাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। জনসংযোগে নেমে তিনি প্রয়োজনীয়সংখ্যক নেতাকর্মীকে সঙ্গে পাচ্ছেন না। মহানগর বিএনপির দ্বিতীয় সারির নেতা থেকে শুরু করে দলটির ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীও ছুটছে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর দিকে। কেউ সরাসরি আবার কেউ নীরবে লিটনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

দলীয় সূত্রের দাবি, রাজশাহী বিএনপিতে নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে জাহির করতে গিয়ে বুলবুল নিজেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। অথচ ২০১৩ সালের চিত্র ছিল ভিন্ন। বুলবুল যেখানেই ছুটে যেতেন, সেখানেই উপচে পড়ত ভিড়।

বিএনপির নেতা ও নাশকতা মামলার আসামিদের নৌকার পক্ষে কাজ করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাদের কাউকে দলে যোগদান করানো হয়নি। তবে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে রাজশাহীর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আমার হয়ে এবার কাজ করছে বলে জানি। এটা খারাপ কিছু না। ভোট আর রাজনীতি এক নয়। মানুষ ভালোবেসে আমাকে যদি ভোট দেয় বা নির্বাচনে আমার হয়ে কাজ করে, সেটা আমার বড় পাওয়া। রাজশাহীর উন্নয়নের কথা বিবেচনা করেই হয়তো অনেকেই এবার আমার হয়ে কাজ করছে। আমাকে ভোট দিতে চাইছে।’

বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর লিটনের পক্ষে কাজ করার বিষয়টি জানেন কি না জানতে চাইলে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কেউ কেউ মামলার ভয়ে, কেউ হুমকির ভয়ে আসছেন না। তবে সবাই আমার পক্ষেই কাজ করছেন। গোপনে বা যে যাঁর জায়গা থেকে আমার হয়ে কাজ করছেন দলের নেতাকর্মীরা।’ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কাজ করছে কি না তা তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি। বুলবুল বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীরা এবার প্রকাশ্যে আসতে ভয় পেলেও জনগণ নীরব ভোট বিপ্লব ঘটাবে। এ কারণে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে।’

জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ কাজ করছেন লিটনের পক্ষে। গত শুক্রবার তিনি মেয়র পদে পরিবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নৌকার পক্ষে ভোট চান। মামুন প্রচার চালিয়েছেন নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মোমিনের পক্ষে প্রচারে নেমে তিনি নৌকায় ভোট দেওয়ার অনুরোধ করেন। বিএনপির এই নেতা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোমিনের পথসভায় বক্তৃতাও করেন। মামুন-অর-রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোমিনের হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে কোনো মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি না।’

একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ছোট ভাই ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদ হাসান এবার নীরব ভূমিকা পালন করছেন। সাইদ হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নানা কারণে আমি এবার প্রচারে অংশ নিচ্ছি না। তবে কারো পক্ষে আমার অবস্থান নয়।’

বিএনপির সাংগঠনিক ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন এবার প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তিনি লিটনের সঙ্গে একটি পথসভায় বক্তব্যও দিয়েছেন। বিএনপির নেতা এবং আসন্ন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মনির হোসেন বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য লিটনের পাশে আছি। রাজশাহী এবং এলাকার উন্নয়ন চাইতে হলে লিটনকে ভোট দিতে হবে। তাই এবার লিটনের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি।’

জানা গেছে, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন, মতিহার থানা বিএনপির সভাপতি আনসার আলী, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুলতান আলী, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সাংগঠনিক ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সোবহান লিটন আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর পথসভায় অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা লিটনের হয়ে ভোটও চাচ্ছেন।

রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুলতান আলী  বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। এ অবস্থায় মেয়রের নির্বাচনে কাজ করব কিভাবে?’

মতিহার থানা বিএনপির সভাপতি আনসার আলী বলেন, দলের নেতাকর্মীরা যে যার মতো কাজ করছে।

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন মহানগর বিএনপির সাবেক অর্থবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রিপন। শুরু থেকেই তিনি লিটনের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তবে এ নিয়ে গতকাল শনিবার বিকেলে রফিকুল ইসলাম রিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রচারে শুরু থেকেই লিটন এগিয়ে থাকায় বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের বেশির ভাগই লিটনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ২০১৩ সালে বিএনপিপন্থী ২৩ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জন এবার লিটনের হয়ে কাজ করছেন। এর বাইরে দুজন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তরিকুল আলম পল্টু। দুজনের নামেই রয়েছে নাশকতার মামলা। তাঁরা মামলা থেকে বাঁচতে এবং পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে চান।

জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আলতাফ হোসেন, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি লুত্ফর রহমান, বিএনপি নেতা রতনের এবার নির্বাচনে কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। যদিও লুত্ফর রহমান আগেই স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে অবসর নিয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল তাঁকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা যায়, এর বাইরেও অনেকে নিজ দলের মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে চুপ আছেন। বিএনপির এসব নেতা পরোক্ষভাবে লিটনের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। অবশ্য বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ নিজের নিরাপত্তা এবং অভিমান থেকেই নির্বাচনে নীরব রয়েছেন।

১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম বাদশা বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারো হয়ে কাজ করছি না। ছেলের জন্য ঢাকায় আছি। নির্বাচনে কী হচ্ছে বলতে পারব না। তবে গতবার আমাদের প্রার্থীর জন্য অনেক কাজ করেছিলাম।’

রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কালাচাঁদ বলেন, ‘আমি নির্বাচন সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না। তবে জরুরি কাজে রাজশাহীর বাইরে অবস্থান করছি।’

গত নির্বাচনে বুলবুলের পক্ষে সহকারী নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। এবার তিনিও নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র:  কালের কণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email