|

ভালুকার ফেসবুক সয়লাব রাজনৈতিক নেতাদের ‘সৈনিক’ ‘সমর্থক’ আইডিতে

প্রকাশিতঃ ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮

মো. সাখাওয়াত হোসেন সুমন, ভালুকার খবর: শিল্প সমৃদ্ধ ভালুকায় ফেসবুক ওয়াল এখন সয়লাব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ‘সৈনিক’ ‘সমর্থক’ আইডিতে। এসব ফেসবুক আইডি থেকে গণহারে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোসহ বিনা অনুমতিতে দেওয়া হয় ট্যাগ। যার ফলে প্রতিনিয়ত বিরক্ত ও বিব্রত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মানুষের দৃষ্টি কাড়তেই নেতারা এ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন সমাজ। অনেকের মতে, নেতারা তাদের অনুসারীদের দিয়ে এইসব ফেসবুক আইডি খুলিয়ে জনমত বৃদ্ধির যে পন্থা অবলম্বন করছেন তাতে জনমত বৃদ্ধির চেয়ে হ্রাসই পাচ্ছে বেশী। অনেক কর্মী আবার নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অতি উৎসাহী হয়ে বিনা অনুমতিতে নামের সাথে ‘সৈনিক’ ‘সমর্থক’ ‘সোলজার’ লাগিয়ে ফেসবুক আইডি খুলে নানারকম তেলবাজী কাহিনী লিখে ছবি পোষ্ট করে থাকেন।

ভালুকার খবরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুক কেন্দ্রীক রাজনীতির তালিকায় আ‘লীগ ও বিএনপি থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছাড়াও রয়েছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবলীগ, যুবদলসহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর পদধারী নেতাগণ। ফেসবুক সার্চে দেখা যায় ভালুকার একসময়ের সুপরিচিত পাগল পারুল মামুর ছবি দিয়ে “পারুল মামুর সৈনিক” নামের একটি আইডি। টাইমলাইনে ওই পাগলের ছবি পোষ্ট দিয়ে লিখা রয়েছে ‘পারুল মামুকে ভালুকার এমপি হিসেবে দেখতে চাই’। যার ফলে রাজনীতি নামক মহান কর্মটিকে কলুষিত হচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

ফেসবুক কেন্দ্রীক রাজনীতির এই সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়াটা প্রকৃত অনেক নেতা অনাগ্রহী হলেও, কর্মীর মন খারাপ হবে বলে কিছু বলতেও পারেন না। কিছু কিছু নেতা আবার এসবে খুশী হয়ে আরও ভালো ভাবে তেলবাজী করার জন্য স্মার্ট ফোন উপহার দেন অনেক কর্মীদের।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার আহাম্মেদ সুজন বলেন, ‘অমুক’ ভাইয়ের সৈনিক, ‘তমুক’ ভাইয়ের সমর্থক, সোলজার ইত্যাদি নামে ফেসবুক আইডি দিয়ে নিজেদের মিথ্যা গুণ-গান গাওয়ানোর যে অসুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে এটি ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য অশুভ সংকেত বহন করে। এই ফেসবুক কেন্দ্রিক রাজনীতিবিদদের মাঠ পর্যায়ে উপস্থিতি তেমন দেখা যায়না। তারা শুধু একটি বাজারে ৫মিনিট সময় দিয়ে ২টা ছবি তুলতে পারলেই কাজ শেষ, ছবিটা নেতার অনুসারী শীষ্যরা হাতে পেয়ে নামে বেনামে খোলা ফেসবুক আইডি থেকে ‘ব্যাপক’ গণসংযোগ সম্বলিত লেখনী লিখে অপলোড দেন। পরে ফোন বা মেসেজ দিয়ে ‘অমুক ভাইকে এমপি বা সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে দেখতে চাই’ লিখে কমেন্টও করান। এতে প্রকৃত দলপ্রেমীরা বিব্রত হচ্ছেন।

হালিমুন্নেছা চৌধুরাণী মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আনোয়ারা নীনা বলেন, রাজনীতির জন্য বিষয়টা খুব দুঃখজনক, এই পরিবেশটা সম্প্রতিই চালু হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক সুসময়ের মাছি হয়ে যারা ফেসবুক ওয়ালে উড়ছে তারা কি রাজনৈতিক দুঃসময়ে মাঠে থাকবেন? নাকি উড়ে যাবে সুসময়ের মাছি হয়েই? ফেসবুক কেন্দ্রীক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের কাছাকাছি গিয়ে সকলের সুখ দুঃখের কথা নেতারা মন দিয়ে শুনবেন এবং বুঝবেন এই আহবান রইলো সকল রাজনীতিবিদদের প্রতি।

Print Friendly, PDF & Email