|

কোন দিকে তিন নেতা

প্রকাশিতঃ ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ | অক্টোবর ০২, ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’য় বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যোগদান এখনো অনিশ্চিত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান তিনি মানতে পারছেন না। এর মাঝে যোগ হয়েছে বিএনপিরও এক ধরনের আপত্তি-বিতর্ক। সব মিলিয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলেও শেষ পর্যন্ত বি চৌধুরী কী করবেন তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ (অব.) বীরবিক্রম জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা নেতাদের কেবল গণবিচ্ছিন্নই বলেননি, যুক্তফ্রন্ট নেতাদেরও তুলাধোনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দোকানদারের সঙ্গে যারা পরাজিত হন, তারা কীভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন?’ একইসঙ্গে তিনি মাহী বি চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা ভিওআইপির ব্যবসা করছেন কীভাবে?’ তার দলের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, ‘জামায়াত আছে জেনেই আমরা ২০-দলীয় জোটে গিয়েছি।’ গুঞ্জন রয়েছে কর্নেল অলিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটও কাছে টানছে। শেষ পর্যন্ত অলির তরী কোথায় গিয়ে ভিড়বে তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মহানগর নাট্যমঞ্চের সমাবেশে যাননি। তবে তিনি সবার ঐক্য যেমন চেয়েছেন, তেমনি বলেছেন, শেখ হাসিনাবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্র নেই। আওয়ামী লীগের জোট বঙ্গবীরকেও পাশে চাইছে। কাদের সিদ্দিকী সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছেন। শিগগিরই তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই পক্ষের পাল্লা ভারী করার প্রতিযোগিতা চলছে। পর্দার অন্তরালে চলছে যোগাযোগ আর দৌড়ঝাঁপ। এই তিন নেতা কোন দিকে যাচ্ছেন তা সব মহলে প্রশ্ন থাকলেও পর্যবেক্ষক মহল বলছে, দীর্ঘ সংগ্রামের পথে আর যাই করুন তারা জনমতের বাইরে যাবেন না। জানা যায়, বিএনপির ভিতরও এই তিন নেতার অবস্থান নিয়ে আলোচনা চলছে। ড. কামাল হোসেনের পাশাপাশি ছাড় দিয়ে হলেও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে জোটে রাখার পক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেক নেতা। কর্নেল অলি আহমদকেও হারাতে নারাজ বিএনপির শীর্ষ মহল। বাড়তি যুক্ত করতে চাচ্ছেন তারা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে। কিন্তু বিএনপির ভিতরে কট্টরপন্থি নেতারা এখনই ঐক্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। মির্জা আব্বাসের রবিবারের জনসভায় বক্তব্য ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের অবস্থান নিয়েও নেতা-কর্মীদের মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। তবে কারান্তরিন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে। সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে লন্ডন থেকে টেলিফোনে তারেক রহমান কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে। তাদের তিনি বলেছেন, ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ধরে রাখতে। প্রয়োজনে কথা বলতে হবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গেও। কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, ভোটের হিসাব-নিকাশ নিয়েই ঐক্য চলছে। এখানে জামায়াতকে নিয়ে কোনো ইস্যু হচ্ছে না। কারণ, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের কোনো নিবন্ধন নেই। বিএনপির সঙ্গে কোনো ভোটের জোটেও তারা নেই। তাই ঐক্য প্রক্রিয়ায় এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই।

তবে বি চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্য চেষ্টায় থাকা বিএনপিকে এক হাত নিয়েছেন এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ (অব.)। গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বলি, জনগণের কাছে যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, দোকানদারের কাছে যারা পরাজিত, তাদেরকে মাহাথির বানান কেন? ৯০ বছরের বুড়োকে ৮০ বছর বানানো যাবে, কিন্তু ৫০ বছর বানানো যাবে না। মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার জন্মদাতা, আধুনিক মালয়েশিয়ার নির্মাতা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই।’ বি চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা তো ছেলের কাছে বিক্রি হয়ে যাই। যারা আজকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় আছেন, তাদের অনেকের ছেলে ভিওআইপি ব্যবসা করেন।’

রবিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ঐক্য হলে ভালো। না হলে ক্ষতি নেই। বিএনপি একাই আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’ স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিএনপি ঐক্যের জন্য সব সময় প্রস্তুত। বিএনপির এ আন্তরিকতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। লোক নেই, জন নেই, বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। চাপ সৃষ্টি করে অনৈক্যের সুর পাকালে জনগণের কাছে ধিকৃত হবেন।’ তবে বিকল্পধারার যুগ্মমহাসচিব প্রজন্ম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাহী বি চৌধুরী রবিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘১৫১ আসন পাওয়ার পর বিএনপির চেহারা দেখেছি। ওই চেহারা আর দেখতে চাই না। ভয় দেখিয়ে কোনো ঐক্য করা যাবে না। মুখে বলবেন এক কথা, কাজে আরেক, তা হবে না। আমরা ভারসাম্যের রাজনীতি ও সরকার চাই। এককেন্দ্রিক সরকার আর নয়।’

সুত্র: বাংলাদেশপ্রতিদিন।

Print Friendly, PDF & Email