|

‘স্বনির্ভর’ হচ্ছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড

প্রকাশিতঃ ১:০৩ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ১৩, ২০১৮

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: দেশের ১১ তম শিক্ষা বোর্ড হিসেবে ময়মনসিংহের যাত্রা শুরু হলেও ‘স্বনির্ভর’ হতে সময় লাগবে আরও বছরখানেক। আর এই সময়টাতেই নিজেদের অধীনে প্রথম পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু হবে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম পাবলিক পরীক্ষার ‘মাইলফলক’ স্পর্শ করবে বোর্ডটি। ঠিক পরের বছরই এই বোর্ডের অধীনেই প্রথমবারের মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নেবে চার জেলার শিক্ষার্থীরা।

এখনও নিজস্ব ভবনের বন্দোবস্ত না হলেও ডেপুটেশনে আসা মাত্র ১৪ জন কর্মকর্তা নিয়ে পুরোমাত্রায় কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চেয়ারম্যান ও সচিবকে।

তবে নিয়ম মোতাবেকই স্কুল-কলেজের রেজিস্ট্রেশন, পরিদর্শন, নবায়ন, পাঠদান, স্বীকৃতি ও অনুমোদনের কাজ ঠিকই পরিচালিত হচ্ছে।

জানা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহের চার জেলার বাসিন্দাদের চার দশকের প্রাণের দাবি ময়মনসিংহ বিভাগ ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড গঠনের কাজ। কিন্তু গোটা এই গঠন কার্যক্রম এগুচ্ছিলো ঢিমেতালে।

এরপর ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে নবম ও সব শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ১১ তম হিসেবে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন দেন। আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ওই বছরের ২৮ আগস্ট।

একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় শহরের আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. গাজী হাসান কামালকে।

এরপর থেকেই ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুর জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান এবং উন্নয়নের কাজ পরিচালনা করে আসছে বোর্ডটি।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের মূল ভবন হবে ব্রক্ষপুত্র নদের ওপারে। বোর্ডের জন্য ইতোমধ্যেই ৫ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ময়মনসিংহ সফরে বোর্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে। এখন আপাতত ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ভবনের ৫ থেকে ৬টি কক্ষে চলছে বোর্ডের কার্যক্রম।

শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাত্র পাঁচ কর্মকর্তা নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম শুরু করেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী হাসান কামাল। গত বুধবার (১০ অক্টোবর) উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপ-স্কুল পরিদর্শকসহ ডেপুটেশনে আরও আট কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে পৃথক হলেও এখনও তাদের সহায়তা নিয়েই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের। এই বোর্ডের কার্যক্রম পুরোমাত্রায় সচল করতে ১৭৫ জনের মতো জনবল প্রয়োজন। সেখানে সাকুল্যে মাত্র ১৪ জন কর্মকর্তা নিয়ে কোনমতে চলছে কার্যক্রম।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের সচিব কিরিট কুমার দত্ত জানান, এখনও জেএসসি থেকে শুরু করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ‘স্বনির্ভর’ হতে চাই। ইতোমধ্যেই আমরা সেই পথে এগুতে শুরু করেছি।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী হাসান কামাল বলেন, ২০১৯ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ওই বছরের অক্টোবর মাসের দিকে আমাদের বোর্ডের অধীনেই প্রথম এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ডিসেম্বরে হবে প্রথম ফলাফল।

২০১৮ সালে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন চলতি বছরের আগস্টে শেষ হয়েছে। আর গত সেপ্টেম্বর মাসে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন শেষ হয়েছে।

২০২০ সালেই বোর্ডের অধীনে প্রথম ওই দুই পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ফলাফল প্রকাশিত হবে, যোগ করেন চেয়ারম্যান কামাল।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক কিরিট দত্ত আরও বলেন, রাজশাহী থেকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পৃথক হতে কমপক্ষে ৮ বছর সময় লেগেছে। আমরা গত বছরের সেপ্টেম্বরেই পৃথক হয়েছি। যদিও এখন পর্যন্ত জনবলসহ সামগ্রিক বিষয়ে ‘মাদার বোর্ড’ হিসেবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড আমাদের সহায়তা করছে।

আমরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ওএমআর মেশিন, সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন, অ্যাডমিট কার্ডের জন্য হেভি মেশিন ও প্রিন্টার কিনতে হবে।

একেকটি মেশিনের দাম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে। এজন্য সরকার কোনো অর্থ বরাদ্দ দেবে না। বোর্ডের নিজস্ব অর্থায়নে এসব ব্যয় মেটাতে হবে। এজন্যও সময় প্রয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email