|

কাকে রেখে কাকে খেলাবে বাংলাদেশ!

প্রকাশিতঃ ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ | অক্টোবর ২৭, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট, ভালুকার খবর: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন ইমরুল কায়েস। খুব একটা খারাপ করেননি এশিয়া কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করা লিটন দাস। হঠাৎ সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকারও দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে। সাকিব-তামিম ফিরলে দুটি জায়গা নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে লিটন, ইমরুল ও সৌম্যকে।

তামিম ইকবাল বেশ দ্রুত সেরে উঠছেন। হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকেই দেখা যেতে পারে বাঁহাতি ওপেনারকে। চোটে পড়ায় জিম্বাবুয়ে সিরিজটা দূর থেকে দেখা তামিমের মনে কি একটু সংশয় জাগছে নিজের জায়গা নিয়ে? ভয় নেই তাঁর! দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বাঁহাতি ওপেনার নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান আপাতত তাঁর জায়গা নিতে পারবেন না।

তামিম অবশ্য রসিকতা করে বলতে পারেন, জিম্বাবুয়ের সিরিজে টপ অর্ডারে বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান যেভাবে খেলেছেন, বাদ দেবেন কাকে? ইমরুল কায়েস সম্ভবত তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ছন্দে আছেন এই মুহূর্তে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে কী দুর্দান্ত ব্যাটিংটাই না করলেন বাঁহাতি ওপেনার। ১৪৪, ৯০ রানের পর শেষ ম্যাচেও করেছেন ১১৫। এশিয়া কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করা লিটন দাস কিছুটা নিষ্প্রভ থাকলেও সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৩ রান করে বার্তা দিয়ে রেখেছেন ওপেনিংয়ে তামিমের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে তাঁকে উপেক্ষা করার উপায় নেই।

সিরিজের শেষ ওয়ানডের আগে হঠাৎ ডাক পাওয়া সৌম্য সরকার বলেই মাঠে নেমেছেন, ‘সুযোগ পেলে সেটার সর্বোচ্চ কাজে লাগাব।’ সুযোগের সদ্ব্যবহার তিনি করেছেন। সাড়ে তিন বছর পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, চেনা সৌম্যকে দেখা গিয়েছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের এই রাতে। টগবগে আত্মবিশ্বাস, ইনিংসজুড়ে আক্রমণাত্মক, ইতিবাচক ব্যাটিং আর স্ট্রোকের ফুলঝুরি। এই সৌম্যকে দেখা চোখের জন্যও প্রশান্তির। সৌম্যকে নিয়ে যে প্রচলিত ধারণা, শুধু ‘হ্যান্ড-আই’ সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করে ব্যাটিং করেন, সেটিও ভুল প্রমাণ করেছেন। বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের পায়ের কাজ ছিল দেখার মতো। স্বচ্ছন্দে ড্রাইভ করছেন, পুল করছেন। আবার ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে তেড়েফুঁড়ে জিম্বাবুইয়ান বোলারদের আছড়ে ফেলছেন বাউন্ডারির ওপারে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্যর এই ব্যাটিং দেখে নির্বাচকেরা কীভাবে তাঁকে বাইরে রাখবেন পরের সিরিজে? তিনি যদি একাদশে নিয়মিত হন, তবে খেলবেন কোথায়? জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে নেমেছেন তিন নম্বরে। গত জানুয়ারি থেকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ তিনের সমাধান করেছে সাকিব আল হাসানকে দিয়ে। আঙুলের চোটে পড়ায় বাঁহাতি অলরাউন্ডার এখন দলের বাইরে। সাকিব ফিরলে তাঁর জন্য নিশ্চয়ই ফাঁকা রাখতে হবে তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনটা।

নিজেদের মধ্যে এই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন ইমরুল, ‌‌‌‌‘তামিমকে নিয়ে কিছু বলব না। কোনো সন্দেহ নেই সে বাংলাদেশের বড় ব্যাটসম্যান। আসলে কে কোথায় খেলবে, এটা টিম ম্যানেজমেন্টই সিদ্ধান্ত নেবে। এটা তাদের বিষয়। আমাদের কাজ, আমরা যখন মাঠে নামি শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা চলছে। দলের জন্য খুব ভালো। বিশ্বকাপ পর্যন্ত যদি আমরা এটা ধরে রাখতে পারি, বিশ্বকাপে ভালো ফল আশা করা যায়। এর ভেতর থেকেই আমরা হয়তো ঘুরেফিরে খেলব। খেলতে হবে কাউকে না কাউকে।’

তাহলে কী দাঁড়াল? উদ্বোধনী জুটি ও ‘নাম্বার থ্রি’—তিনটি জায়গায় এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে। হ্যাঁ, সৌম্যকে সাতেও খেলানো যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ তো সেখানে চেষ্টা করছেন সাইফউদ্দিনকে থিতু করতে। তাহলে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ হলেন সাইফউদ্দিনও। আরেক পেস বোলিং অলরাউন্ডার আরিফুল হককেও হিসাবের বাইরে রাখার উপায় নেই। সৌম্য অবশ্য সাত নম্বর নিয়ে চিন্তিত নন, ‘সাত নম্বরের কথাটা আপনারদের কাছ থেকেই শুনেছি। দলের ভেতরে এখনো শুনিনি।’

ব্যাটসম্যানদের এই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা দিচ্ছে বাংলাদেশকে। দলে এমন স্বাস্থ্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা মানে হাতে যথেষ্ট বিকল্প খেলোয়াড় থাকার নিশ্চয়তা। আর যথেষ্ট বিকল্প খেলোয়াড় তখনই থাকবে, যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলোয়াড়েরা ধারাবাহিক ভালো করবেন। যেটি এই সিরিজে সৌম্য-ইমরুল-সাইফউদ্দিন করেছেন।

ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এটি অবশ্য বোলারদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কম। পেস আক্রমণে মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান। তৃতীয় পেসার হিসেবে কখনো রুবেল হোসেন, কখনো আবু হায়দার কিংবা সাইফউদ্দিন, এটিই দেখা যাচ্ছে অনেক দিন ধরে। স্পিন আক্রমণে সাকিবের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ। সাকিবের সঙ্গী কিংবা বদলি হিসেবে আরেকজন বাঁহাতি স্পিনারের শূন্যতা এখনো ভালোভাবে পূরণ হয়নি। চিন্তা আছে ষষ্ঠ বোলারকে নিয়েও। মাহমুদউল্লাহ অনেক সময় আসেন ষষ্ঠ বোলারের প্রয়োজন মেটাতে। কখনো সফল হন, কখনো হন না। ব্যাটসম্যানদের মতো বোলারদের মধ্যেও যদি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠে, নিশ্চিত বলা যায়, দুর্দান্ত এক দল নিয়েই ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ।

Print Friendly, PDF & Email