|

ভালুকার খবর’র সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা

প্রকাশিতঃ ৭:০৮ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ০৭, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্ট, ভালুকার খবর: ভালুকা থেকে প্রকাশিত “ভালুকার খবর” পত্রিকার সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান সুমন ও প্রকাশক প্রভাষক আনোয়ার হোসেন তরফদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছে। “জামাত শিবির নিয়ন্ত্রিত ভালুকা ডটকমের সংবাদ সন্ত্রাসে অতিষ্ট ভালুকাবাসী” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করায় জনৈক আব্দুল আওয়াল ঢালী নামের এক সাংবাদিক বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন। সাংবাদিক পরিচয়ে বাদী হয়ে অপর পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগে মামলা করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের ব্যাক্তিগণ। আব্দুল আউয়াল ঢালী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অবস্থান দাবি করে জামাত শিবিরের পক্ষে এই অবস্থানকে তীর্যক দৃষ্টিতে দেখছেন ভালুকার সচেতন সুশীল সমাজ।

প্রকাশ, গত ১৩ই সেপ্টেম্বর জেলা ময়মনসিংহ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ৩নং আমলী আদালতে দায়েরকৃত ৫০০/৫০১ ধারায় (মোঃ নং-৭৪৭/২০১৮) নং মামলার আর্জিতে আব্দুল আউয়াল ঢালী নিজেকে ভালুকা ডটকম এর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম মোস্তুফা, পৌর মেয়র ডাঃ একেএম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম ও ভালুকা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফকে উপদেষ্ঠা হিসেবে উল্লেখ করেন। পরে মামলা সংক্রান্ত একটি সংবাদ ভালুকা ডট কমে প্রকাশিত হলে উপদেষ্ঠা হিসেবে দাবী করা ওই তিনজন সম্মানিত ব্যাক্তি তাদের নাম ও পদবী ভালুকা ডট কমে বিনা অনুমতিতে ব্যাবহার করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্যাডে লিখিত ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে কড়া প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। ভালুকা ডট কমের উপদেষ্টা হিসেবে ভালুকা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ তার নাম পদবী ব্যাবহারের বিষয়ে অবগত নয় এবং পত্রিকাটির সাথে তার কোনরকম সংস্লিষ্টতা নেই বলে কলেজের নিজস্ব প্যাডে লিখিত ঘোষনা পত্র দেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়র তাদের ঘোষণা পত্রে লিখেন ভালুকা ডটকম নামক জামাত শিবির নিয়ন্ত্রিত পত্রিকাটির সাথে তারা কোন ভাবেই জড়িত নয়, বিতর্কিত অনলাইন পত্রিকাটির পরিচালনা পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে সম্পূর্ণ বে-আইনী ভাবে তাদের নাম ও পদবী ব্যবহার করা হচ্ছে । তারা লিখেন, স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী ওই অনলাইন পত্রিকাটি তাদের বিনা অনুমতিতে নাম ও পদবী ব্যবহার করে একদিকে যেমন তাদের সম্মানহানী করছে, অন্যদিকে অবৈধ উদ্দেশ্য হাসিলেও লিপ্ত রয়েছে। তারা ভালুকা ডট কম এর সাথে হাজী জহিরুল ইসলাম জুয়েল জড়িত ও পরিচালনা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অপরদিকে জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও তার দুই সহোদর কম্পিউটটার এর মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়ন পত্রে জালিয়াতি করেছে মর্মে ওই জালিয়াতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ওই ঘোষণা পত্রে আরও উল্লেখ করেন, হাজ্বী জহিরুল ইসলাম জুয়েল ৯০ দশকে জামায়েত ইসলামী’র ছাত্র শিবিরের ভালুকা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

মামলার বাদী যাদের সম্মান হানীর অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেছে অনলাইনটির ওয়েবসাইট ঘেঁটে কোথাও পরিচালনা পরিষদ বা ওইসব ব্যাক্তিগণের কারও কোন নাম ও পদবী পাওয়া যায়নি।

ভালুকা প্রেসক্লাবের সদস্য ও ক্লাবের বাইরের একাধিক নিয়মিত সংবাদকর্মীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, আব্দুল আউয়াল ঢালী ভালুকা ডটকমের একজন স্টাফ রিপোর্টার। ভালুকা ডট কমের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও সঞ্চালক হিসেবে আফতাব উদ্দিন সানি ওরফে হাজী সানির বাইরে কাওকে চিনেন না বলে জানিয়েছেন ভালুকা প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুজ্জামান মানিক। তিনি আরও বলেন বর্তমানে তাদের পত্রিকার ওয়েবসাইটে কোথাও কোন পরিচালনা পর্ষদের কমিটি বা কারও নাম নেই। উপদেষ্ঠা হিসেবে শফিউল্লাহ লিটন নামের একজনের নাম রয়েছে। পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিষ্ঠাতা মেনুতে রয়েছ শুধুমাত্র আফতাব উদ্দিন সানি ওরফে হাজি সানির নাম। পরিচালক মেনুতে একসময় জহিরুল ইসলাম জুয়েলের নাম পদবী ও ছবি থাকলেও বর্তমানে ওই মেনুটি ব্ল্যাংক রয়েছে।

প্রতিনিধিমন্ডলীর তালিকায় মিলেছে চোখ ধাঁধানো এক তথ্য, সেখানে ভালুকা ডট কমের পরিচালনা কমিটির সভাপতির পরিচয়ে মামলা করা আব্দুল আউয়াল ঢালীর নাম ও ছবিযুক্ত আইডি কার্ডে তার পরিচয় পাওয়া গেছে চীফ রিপোর্টার হিসেবে। মামলার বাদী নিজেকে পত্রিকার সভাপতি পরিচয়ে মামলা করেছে অথচ অনলাইনে অগাধ জায়গা থাকলেও পত্রিকায় কোথাও তার নাম বা পদবী নেই । ভালুকা ডট কম ও আব্দুল আওয়াল ঢালীর এমন কান্ড সাংবাদিক সমাজে যেমন হাসির খোরাক মিটিয়েছে তেমনই পেশাদার সাংবাদিকদের বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীনও করেছে। পেশাদার সাংবাদিকগণ সম্মানের এ পেশাটিকে কলুষিত ও সমালোচনার দিকে ঠেলে দেওয়ায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সূতে জানা যায়, ভালুকা ডট কমের সর্বশেষ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য একটি অস্থায়ী উপকমিটি গঠন করা হয়েছিলো সেই কমিটিতে আব্দুল আওয়াল ঢালীকে সভাপতি করে করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয় যা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের পর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা। অপরদিকে মামলার স্বাক্ষী হিসেবে ব্যাবহার করা সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান তরফদার, আম্বিয়া খাতুন দীনা ও খাইরুল বাসার তাদের বিনা অনুমতিতে নাম ও পদবী ব্যাবহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ভালুকা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এস এম শাহজাহান সেলিম জানান, আব্দুল আউয়াল ঢালী আমাদের প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি তিনি এই প্রেসক্লাবের আরেকজন সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যের বিরুদ্ধে এমন একটা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মামলা করায় আমরা হতাশ হয়েছি। ভালুকার খবর পত্রিকাটি সংবাদ প্রকাশ করেছে জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও তার ভাই হাজি সানির বিরুদ্ধে, এখানে আওয়াল ঢালী বাদী হয়ে মামলা করার বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। তাছাড়া তিনি কবে কখন ভালুকা ডট কমের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন আমরা শুনলাম না বা কোন পত্রপত্রিকায়ও দেখলাম না।

ভালুকা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক খান উজ্জল জানান, আমাদের প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সৌহার্দ সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য একটি মহল সবসময় তৎপর ছিলো এখনও আছে। তবে আমাদের উচিৎ এসব বিষয়ে সজাগ থেকে সাংবাদিকদের ভাব মুর্তি সমুন্নত রাখা। এরকম কার্যক্রম চলতে থাকলে একসময় জনসাধারণ আমাদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে।

ঘোষনা পত্রগুলো নিচে হবুহু তুলে ধরা হলো:

 

Print Friendly, PDF & Email