|

ভালুকায় দূষণে-দখলে বিপর্যস্থ খিরু’র কান্না

প্রকাশিতঃ ৪:৪১ অপরাহ্ণ | মে ১১, ২০১৯

স্টাফ রিপোর্ট, ভালুকার খবর: একসময় খিরু নদী ছিলো ভালুকার আশীর্বাদ। হরেক রকমের মাছ মিলতো। খীরু‘র বুক চিরে চলাচল করতো লঞ্চ ও পালতুলা নৌকা। খিরু‘র পানি ছিলো স্বচ্ছ টলমলে। সেচ নির্ভর ছিলো এই পানি। নদীর দু পাশের মানুষ গোসল করতো খিরুতে। সেই খীরু’র বুক জুড়ে এখন শুধুই হাহাকার।

খীরু’র পানির দিকে তাঁকানোর জো নেই। খিরু‘র পানি এখন প্রচন্ড দূর্গন্ধযুক্ত, ধারন কালছে কালচে বিবর্ণ রঙ। খিরু এখন হয়ে উঠেছে বয়াবহ বিষাক্ত। খিরু’র বুক জুড়ে এখন শুধুই কান্না। খীরু নদী যেন স্মৃতিময় দীর্ঘশ্বাস । দূষণে-দখলে-বর্জ্যে সুতিয়া হয়ে উঠেছে বিপর্যস্থ। খিরু‘র শাখা প্রশাখার জায়গা সংকুচিত হয়ে যাওয়া দেখলে মনে হবে যেন কোনো এঁদো ডোবা। এক সময়ের মিষ্টিপানির নদী খিরু‘র বর্তমান অবস্থা এমনই।

অবৈধ দখল ও শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলার কারনে তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। এলাকার কৃষক নিরোপায় হয়ে এ বিষাক্ত পানি দিয়েই চালাচ্ছে চাষাবাদ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে নদীতে মাছ তো দূরের কথা ব্যাঙের দেখা মিলাও দুষ্কর।

সরজমীনে ঘুরে দেখা যায়, নদীর দিকে তাকালেই দখলবাজির পরিমাণটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। জবরদখল প্রক্রিয়া থামাতে মাঝেমধ্যে সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও নানা সীমাবদ্ধতায় থমকে দাঁড়ায়। প্রভাবশালী দখলবাজরা থাকে অপ্রতিরোধ্য।

নদীর পাশ দিয়ে গেলেই রাসায়নিক পদার্থের তীব্র কটু গন্ধ নাকে লাগবে যে কারও। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পড়তে পড়তে নদীর পানি একদম পচে গেছে। বহুদূর পর্যন্ত পানির এ দুর্গন্ধ গিয়ে নাকে লাগে।

জানাযায়, প্রায় দেড় যুগ ধরে তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। দিন দিন অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। আগে সব কাজে মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করত। গোসল করতো। এখন গোসল তো দূরের কথা, এ পানিতে হাত লাগলেই তীব্র চুলকানি হয়। নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় নদীর পাশের গ্রামে টিউবঅয়েল দিয়ে তোলা পানিতেও কটু গন্ধ থাকে। টিউবঅয়েল বেশি গভীর করে না বসালে পানি খাওয়া যাচ্ছে না।

বয়ডা গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নদীপাড়ের বিশাল এলাকার দু-তিন ফসলি জমি এক ফসলি হয়ে গেছে। শুধু বোরো ধান ছাড়া এখানে অন্য কিছু হয় না। কারণ অন্য সময়ের ফসল এ পচা পানি সহ্য করতে পারে না। এ কারণে খিরু নদীর দুই তীরের মানুষের আয় কমে গেছে। তারা আরও জানান, জমিতে বাধ্য হয়েই সেচে নদীর পানি ব্যবহার করতে হয়। তারা এখন জমিতে চাষ করে যে পরিমান ফসল পান, কিন্তু যদি পানি ভালো থাকত, তাহলে এখানে দুই গুণ বেশি ফসল পেতেন। পচা পানির কারণে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। এ পানি জমিতে বেশি পড়লে চারা গাছ পচে যায়। আর পচা পানিতে ক্ষেতে কাজ করলে হাত-পা চুলকায়।

শিক্ষক ও সজামকর্মী শফিকুল ইসলাম খাঁন জানান, ‘কারখানার বর্জ্য খিরু নদীতে ফেলা বন্ধ না করলে এক সময় এ নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এজন্য এখনি নদী খনন ও অবৈধ দখলদান উচ্ছেদ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের এ নদিকে বাঁচানো দরকার। বিষাক্ত পানির কারণে খিরু নদীতে এখন মাছ একেবারেই নেই’।

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘পচা পানির কারণে শুষ্ক মৌসুমে খিরু নদীর দু’তীরের ফসল উৎপাদন কম হয়। পানি ভালো থাকলে উৎপাদন ও ফসলের গুণগত মান আরও বাড়ত।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোমেন শর্মা জানান, অবৈধ ভাবে নদীর দু‘পাশের জমি দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশনা পেয়েছি। অচিরেই নদীর সীমানা ডিমাগ্রেশণ নির্ধারণ করে আমরা অভিযানে মানবো’।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল জানান, ‘নদির সিমানা চিহ্নিতের কাজ চলছে, যে কোন সময় আমরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করবো। আর যে সকল শিল্প কারখানা নদীতে বর্জ্যে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরোদ্ধে আইনআনুগ ব্যাবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে’।

Print Friendly, PDF & Email