|

করোনা ভাইরাস ও কিছু কথা

প্রকাশিতঃ ৭:১৭ অপরাহ্ণ | মে ১১, ২০২০

ড. সাজ্জাদ হোসেন চিশতী:

কোভিট ১৯ বা করোনা নামক ভাইরাসটি চীনের উহানে এসেছে জানুয়ারীতে। তখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বকে সতর্ক করেছে। আমাদের বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বাংলাদেশে করোনা ধরা পড়লো ৮ ই মার্চ। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো আগেই বলে রেখেছেন ৩ মাস আগেই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? আমরা দেখলাম করোনার জন্য যে হাসপাতাল গুলো দেওয়া হলো তারমধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতাল প্রস্তুত না। সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতাল প্রস্তুত না। শুধু কুর্মিটোলা আর কুয়েতমৈত্রী হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা চালু করলো। কিন্তু এই ২ টা হাসপাতালের ১ টারও সেন্ট্রালী অক্সিজেনের ব্যাবস্থা নেই। মূলত করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেনই হচ্ছে প্রধান নিয়ামক। কিন্তু সেই অক্সিজেনেরই ব্যাবস্থা করলো না। তাহলে তিনমাস আগে যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললো প্রস্তুতি আছে তাহলে কি প্রস্তুতি নিল?

আমাদের স্থলবন্দর,নৌবন্দর,আকাশ পথ ছিল খোলা। সেখান দিয়ে হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালী ফেরত এল। ইতালি ফেরত যারা আসলো তাদেরকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য হাজী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু তারা সেখানে থাকলো না। ১ জন বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধর্ষণ করলো!বললো বাংলাদেশি রাষ্ট্রীয় সিস্টেম আই ফাক,আই ফাক বাংলাদেশ, আই এম ইটালিয়ান পাসপোর্টধারী। পরে তাদের তীব্র চাপের মুখে তাদের ছেড়ে দিলো হোমকোয়ারেন্টাইন দিয়ে। কিন্তু কয়জন মেনেছে হোমকোয়ারেন্টাইন? পরে খবর নিয়ে জানা গেছে যে লোক ধর্ষণ করলো বাংলাদেশ কে তার কিছুই হয়নি। সে কুমিল্লা নিবাসি। তার এক ভাই কুমিল্লা জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আরেক ভাই ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি। এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা। স্থলবন্দর, নৌ বন্দর, আকাশ পথ দিয়ে প্রচুর প্রবাসিরা আসলো আর ছড়িয়ে পড়লো আমাদের দেশে করোনা। এই ছিলো আমাদের প্রস্ততি।

তখনতো প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ ছিলো কোন কোন হাসপাতালে চিকিৎসা দিবে, সেন্ট্রালী অক্সিজেনের ব্যাবস্থা, কোথায় কোথায় টেস্ট করাবে, সেই টেস্টের কিট আছে কি না, কারা এই হাসপাতালের চিকিৎসা দিবে সেই ডাক্তার ঠিক আছে কি না, নার্স ঠিক আছে কি না, পিপিই ঠিক আছে কি না, এন৯৫ মাক্স ঠিক আছে কি না, এগুলোর কোন রকম প্রস্ততি না নিয়ে আমরা করোনা মোকাবেলা শুরু করলাম। যার ফলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে প্রচুর ডাক্তার নার্স করোনায় আক্রান্ত হতে শুধু করলো। এক পর্যায়ে মিডিয়ার সামনে ডাক্তার- নার্সরা অভিযোগ করলো, এন ৯৫ মাক্স ও পিপিই নিয়ে সমস্যা নিয়ে। এগুলো সঠিক মানের না যার কারণে তারা আক্রান্ত হচ্ছে। যারা বললো বা অভিযোগ করলো সেই ডাক্তারদের কাউকে ওসিডি করা হলো,কাউকে বদলি করা হলো,মানে সত্যি কথা বলা যাবে না। বিশ্বে অন্যান্য দেশ গুলোতে যারা করোনা চিকিৎসা দিবে তাদেরকে আলাদা জায়গায়,আলাদা হোটেলে রাখলো,কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে তিনি বললেন, আমরা প্রায় ৬’শ রুম হোটেলগুলোতে বুক করেছি। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকবে। কিন্তু দেখা গেল উল্টো চিত্র। কোথাও এই জাতীয় হোটেল করেনি। উত্তরাতে ৩টি হোটেল নিয়েছে যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেক গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। যা মিডিয়াতেও অনেক প্রচার হলো। সঠিক সিদ্ধান্ত ও দুরদর্শীতা না থাকার কারনে পুরো স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাটা ভেঙে পড়লো।

শুরুতে যখন ৮ তারিখে করোনায় আক্রান্ত রোগী ধরা পড়লো তখন বিশ্বের অন্যসব দেশের মতো লকডাউন/কারফিউ না দিয়ে ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো। যেখানে সারাবিশ্বে বিভিন্ন দেশ ,প্রদেশে লকডাউন দিলো সেখানে বাংলাদেশ দিলো সাধারণ ছুটি। একদিকে দিল সাধারণ ছুটি অন্যদিকে বন্ধ করলো না মানুষের চলাচল,যার কারণে মানুষ শ্রোতের মত/ঈদের ছুটির মত বাড়িতে গেল। এতে করে হয়ে গেল কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, যার ফলে করোনার পাদূর্ভাব চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। যদি সাধারণ ছুটিতে লকডাউনটা কঠোর ভাবে মানা হতো, ১৪৪ ধারা জারি থাকতো, ২৫ মার্চ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন সিঈেল লকডাউনটা কঠিন ভাবে মানা হতো তাহলে করোনা অনেকাংশে বিস্তার ছড়াতে ব্যার্থ হতো।

আমরা সেটা করলাম না। আমরা সাধারণ ছুটি নামিয়ে দিলাম। কিছু কিছু জেলা প্রশাসকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে লকডাউন করলো আর বাকি ঢাকা শহর খোলা থাকলো। যার কারণে করোনা পুরোপুরি চারদিকে ছড়িয়ে গেল। এর কারণে দিন দিন করোনা বাড়তে থাকলো। কিন্তু কিছু দিন পর পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যবিভাগ বলে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো আছি। জানিনা ওরা মানুষকে কতটা বোকা ভেবে এমন সান্তনা দিচ্ছে বুঝে আসে না। আমাদেরকে দেখতে হবে আমেরিকা ১টা দেশ কিন্তু সেখানে যে কয়টা প্রদেশ আছে সেখানে ১ টা প্রদেশের সমান আমরা। ভারত ১ টা দেশ কিন্তু ওদের ১ টা প্রদেশের সমান আমরা। তাহলে বিভিন্ন দেশে এত গুলো প্রদেশ সেই তুলনায় হিসাব করতে হবে টোটাল অবস্থাটা কি। আর বাংলাদেশের অবস্থাটা কি। বাংলাদেশ ভারত আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশের ১ টা প্রদেশের সমান আমরা। তাহলে এ নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমরা বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনা করছি। কিন্তু ওরা তো আমাদের মত ছোট্ট দেশ না। তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা আর আমাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থার মধ্যে তুলনা করেন। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিপূর্ণ অবস্থা। সেই তুলনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ কি করেছে? আমাদের যমুনা টিভির সাংবাদিক আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থেকে এসে বললেন, হাসপাতালের ভিতরের অবস্থা ভয়াবহ । ডাক্তার- নার্সরা দূর থেকে এসে কথা বলে চলে যায়। দরজার সামনে এসে চলে যায়। ঠিক মত অক্সিজেন পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্যব্যাবস্থা নিয়েও যদি কোন ডাক্তার নার্স কথা বলে তাদেরকে বদলি করে দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন ,মানবতার মা,আমাদের আশা আকাঙ্খার,শেষ ঠিকানা উনি সারা বাংলাদেশে ভিডিও কনফারেন্স শুরু করলেন এবং শক্ত হাতে হাল ধরলেন।

কিন্তু এখানেও বিধিবাম। ডিসি, এসপি, এমপিরা সত্য কথা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারলে না অদৃশ্য ইশিরায়।

লেখকঃ গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব।

Print Friendly, PDF & Email