|

ভালুকায় ব্যস্ত সময় পার করছে কামার শিল্পীরা

প্রকাশিতঃ ১২:০৪ অপরাহ্ণ | জুলাই ৩১, ২০২০

আনোয়ার হোসেন তরফদার, ভালুকার খবর: আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি বিধানে পবিত্র ঈদে মুসলমানরা দেবেন লাখ লাখ পশু কোরবানি। পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো, মাংস টুকরা করা ইত্যাদির জন্য সবার চোখ এখন ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দিকে।

এসবের জন্য কয়েক দিন ধরে ভালুকার বিভিন্ন স্থানের কামারপাড়ায় ভিড় করছে লোকজন। দেশীয় এসব সরঞ্জাম তৈরি করতে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কামার শিল্পীরা। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটাও সারছেন অনেকে। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কামারপাড়ার লোকদের ব্যস্ততা। আরাম-আয়েশ, নাওয়া-খাওয়া, গল্পগুজব_সবই বন্ধ। কেবল সহকর্মীর সঙ্গেই চলছে একটু-আধটু কথা, তাও কাজ-সংশ্লিষ্ট। আর কথা হচ্ছে ক্রেতার সঙ্গে। কোনো ক্রেতা দিয়ে যাচ্ছেন অর্ডার, কেউ কিনছেন রেডিমেড। আর কেউবা দাম-দরে না মিললে বিদায় নিচ্ছেন; কিন্তু কামাররা কাজ করছেন অবিরাম।

গতকাল রাতে ভালুকার পৌর গিয়ে দেখা গেছে, দগদগে লাল লোহার খণ্ডে কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন, কেউ দিচ্ছেন শান, আইতান বা হাপর দিয়ে কয়লার আগুনে বাতাস করা হচ্ছে, কেউবা সাহায্য করছেন সহকর্মীদের। সবারই হাত, মুখ, পা কালিতে ভরা। তীব্র গরমে শরীর ঘামছে দরদরিয়ে। কিন্তু বৈদ্যুতিক কিংবা হাতপাখার বাতাস নেওয়ারও কোনো অবস্থা নেই। বেশির ভাগেরই কাপড় অর্ধাঙ্গজুড়ে, পরনের লুঙ্গির চেহারাও ময়লায় বেশ ভারী দেখা যাচ্ছিল।

কামার শিল্পীরা বললেন, সারা বছরই কামারদের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা থাকে। তবে কোরবানির ঈদের সময় চাহিদা থাকে খুব বেশি। তাই সে অনুযায়ী কাজ করতে হয় দীর্ঘসময়। তবে এ বছর তাদের ব্যবসা বেশি ভালো না করোনা ভাইরাস এর কারনে তাদের জীবন থমকে গিয়েছিল চাহিদা বেশি নাই। আর অাক্ষেপ করে গোপাল কর্মকার বলেন ৩৬ বছর দরে এই কাজ করে আসছি মানুষের সেবা দিয়ে আসছি সবসময় কিন্তু এই সময় কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি কারো কাছে। এখন বয়স হয়েছে তারপরও ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা টানা পরিশ্রম করেও সময়ানুযায়ী অর্ডার সরবরাহে হিমশিম খেতে হয়। গোপাল কর্মকার জানান, প্রতিবছর কোরবানির ঈদ-ই থাকে তাদের মূল টার্গেট। বছরব্যাপী ব্যবসায়ের বড় লাভটা এ সময়ই ওঠে। জানালেন, লোহার দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকলেও, কয়লার দাম বেগতিক। বর্তমানে বিদ্যুৎ, কয়লা ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় তেমন একটা লাভ হয় না।

তিনি জানান, গত বছর কয়লা কেজিপ্রতি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনলেও এবার দাম অনেক বেশি। গৌরাঙ্গ কর্মকার বলেন ‘কয়লার দামের লাইগা কাস্টমারের ধারে বেশি দাম চাওন লাগে। বেশি দামের লাগি কাস্টমার চলে যেতে চায় । তারা তো বুঝতে চায়না কয়লার লাগিঅই দাম বেশি। তয় আমরা অন্য ব্যবসায়ীর মতন গলা কাডি না।’ একই বাজারের অন্য একজন বলেন, এখনো বিক্রির ধুম পড়েনি। ঈদের আগের রাতে বাজার পুরোপুরি জমে উঠবে বলে জানান তিনি। ভালুকার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় হার্ডওয়ারের দোকান থেকেও অনেকে ছোটখাটো ছুরি-চাকু বা মাঝারি চাপাতি ক্রয় করছেন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে চলছে ছুরি, বঁটি, দা ও বাটনায় দেওয়ার কাজ।

ভালুকার বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাঝারি আকারের জবাইয়ের ছুরি ২৫০ থেকে ৪৫০, বড় ছুরি ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে মাংস কাটার কিংবা চামড়া ছাড়ানোর ছোট ছোট ছুরি। এসব ছুরির আবার বিভিন্ন নামও রয়েছে। ভালুকা বাজারের ছুরি বিক্রেতা গোপাল কর্মকার জানান, কস্তুরি ছুরি বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৩৭০ কামেলা ১১০ থেকে ১৫০ ও স্টিলের ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

Print Friendly, PDF & Email