|

শিক্ষার্থীহীন মাদরাসায় উপবৃত্তিসহ করোনা কালীন ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশিতঃ ৫:০৭ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ১২, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ভালুকার খবরঃ ময়মনসিহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে প্রায় ৪০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত একটি এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের সীমাহীন দূর্নীতি ও জালিয়াতির ফলে বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য কোন ঘর। তবে ভূয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে নিয়মিত উপবৃত্তিসহ করোনাকালীন ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাত ও মাদ্রাসার নামে জাল দলিল সৃজনসহ থেমে নেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের দূর্নীতি ও জালিয়াতি। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের দূর্ণীতির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রতিষ্ঠানটির দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা।

স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের কিছু শিক্ষানুরাগী ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাহমুদপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা নামের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে মাদ্রাসাটি স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ওই এলাকার মো. নাজিম উদ্দিন ৭ শতাংশ ও মো. আজিম উদ্দিন ৩শতাংশ মোট ১০ শতাংশ জমি মাদ্রাসার নামে ৭৬৬২ নং ওয়াক্ফ নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন। মাদ্রাসায় পাঠদানের জন্য পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম, জুনিয়র শিক্ষক লুৎফেওয়ালী রব্বানী, এবতেদায়ী ক্বারী আছমা খাতুন ও জুনিয়ার শিক্ষক দিলারা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিকে কোনরুপ অবহিত বা পরিচালনা কমিটির সভা আহবান না করে পূর্বে অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্ত সমুহের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম দূর্ণীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গোপনে জুনিয়র শিক্ষক লুৎফেওয়ালি রব্বানীকে বহিস্কার একই কায়দায় উক্ত পদটি শুন্য দেখিয়ে, কোন ধরণের নিয়োগ কমিটি গঠন ও নিয়োগ বিজ্ঞাপন ছাড়াই প্রধান শিক্ষক ওই পদে তার স্ত্রী জান্নাতুন নাহার ইতি (জুনিয়র মৌলভী) ও তার সহোদর ভাইয়ের মেয়ে আকলিমা আক্তারকে (জুনিয়র মৌলভী) হিসেবে নিয়োগ দেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে, অবৈধ ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী জান্নাতুন নাহার ইতি’র সাটিফিকেট তদন্ত করে দেখাযায়, তার মাদ্রাসা বোর্ডের কোন সনদ নেই। তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড হতে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেছেন।

মাদ্রাসার দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা মো. নাজিম উদ্দিন জানান, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী নাই, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য কোন ঘর ও আসবাবপত্র পর্যন্ত নেই। তবুও প্রধান শিক্ষক ভ‚য়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে ওইসব ভ‚য়া শিক্ষার্থীর নামে নিয়মিত উপবৃত্তি ও করোনাকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নামে বরাদ্দকৃত ভাতা উত্তোলন করে আতœসাত করেছেন। প্রধান শিক্ষকের এসব সীমাহীন দূর্ণীতি ও অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে বার বার স্থানীয় এম,পি, ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে, সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা শিক্ষা অফিসের একজন কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এস, এম ওয়াসেক আল আমিন শিপন জানান, প্রধান শিক্ষকের সীমাহীন দূর্নীতি ও জালিয়াতির ফলে বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য কোন ঘর। তবে ভ‚য়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে নিয়মিত উপবৃত্তিসহ করোনাকালীন ভাতা উত্তোলন করে আতœসাত ও মাদ্রাসার নামে জাল দলিল সৃজনসহ প্রতারনার মাধ্যমে আমার স্বাক্ষর দিয়ে দূর্নীতি ও জালিয়াতি করে চলেছে।

৫নং বিরুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেদুয়ান সারুয়ার রব্বানী জানান, প্রধান শিক্ষকের সীমাহীন দূর্নীতির কারণে বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী নেই, পাঠদানের উপযোগী কোন ঘর এমনকি কোন আসবাবপত্র পর্যস্ত নেই, তবুও প্রধান শিক্ষক কি ভাবে করোনা প্রনোদনা ও উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করেন। বিষটি তদন্ত পূবক ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছেন তিনি।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসা শুরুতে আমি ছিলাম না, আমি যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানটি পাঠদান উপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে আসছি। অবৈধ ভাবে একজন শিক্ষককে বহিস্কার ও তার স্ত্রী ও ভাতিজিকে নিয়োগদানের বিষয়ে তিনি জানান, নিয়মানুযায়ীই বহিস্কার ও নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মাহমুদপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের করোনা ভাতাসহ নান দূর্নীতির প্রতিকার চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রধান শিক্ষকের দূর্নীতির বিষয়গুলো তদন্ত চলছে।

Print Friendly, PDF & Email