পদ্মায় সৃষ্টি ও স্রষ্টা থাক অবিচ্ছেদ্য | মোল্লা জালাল
প্রকাশিতঃ ৯:৫৬ অপরাহ্ণ | জুন ২৩, ২০২২

॥ মোল্লা জালাল ॥
সৃষ্টি ও স্রষ্টা অবিচ্ছেদ্য। মানব সভ্যতার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য শিল্পের প্রত্যেকটির সাথে সৃষ্টি ও স্রষ্টা অবিচ্ছেদ্য রয়েছে। এটা এমনিতে হয়নি, করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে যুগের পর যুগ মানুষের স্মৃতিপটে সেসব স্থাপত্য অমলীন। ষাটের দশকে স্কুলে ইতিহাসের পাঠ্য পুস্তকে তাজমহল, কুতুব মিনার, লালকেল্লা, ফোর্ড উইলিয়াম দুর্গ, পিরামিড,ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান এসব স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাস ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এসবের ইতিহাস মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় ‘টীকা’ লিখতে হতো। যার ফলে সবাই জানে, কে, কবে, কখন, কিভাবে এসব কালোত্তীর্ণ স্থাপত্য শিল্প সৃষ্টি করেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি ‘বাংলাদেশ’ যেমন গোটা বিশ্বের বিস্ময় তেমনি তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের টাকায় ‘পদ্মা সেতু’ নির্মান করে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়ে সক্ষমতার স্মারক স্থাপন করলেন। এই কীর্তি তাঁকে কালজয়ী করে রাখবে। তবে মানুষের স্মৃতি খুবই দুর্বল। তাই ‘স্মরণীয়’ করে রাখার জন্য যুগে যুগে মানুষ বিভিন্নপন্থা অবলম্বন করেছে। স্কুলের ইতিহাস বইয়ে যদি মোগল, পাঠান,বৃটিশদের ইতিহাস পড়ানো না হতো তবে এতদিন ধরে তাজমহল, কুতুব মিনার, লালকেল্লা, ফোর্ড উইলিয়াম দুর্গ কিংবা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর কথা মানুষ মনে রাখতো না। ভূলে যেতো, ভূলিয়ে দেওয়া হতো। যেমন ভূলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল পাক-হানাদার বাহিনীর বর্বরতার লোমহর্ষক সব ইতিহাস। তাই শ্রুতি ও স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্যই মানুষ স্থাপত্য শিল্প স্থাপন করে, ইতিহাস লিখে রাখে।
এদেশে একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা ইতিহাস খেয়ে ফেলে, বিকৃত করে। নইলে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস নিয়ে এত নোংরামি কেন ! ইতিহাসের নির্ঘন্ট-, ৪৯, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০ এবং ৭১ এর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ। এটা কে জানেনা। তারপরও কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে। রাজনীতির বিরোধীতা আর ইতিহাসের বিরোধীতা এক জিনিস নয়। ইতিহাসের বিরোধীতায় জাতির মর্যাদা বাড়েনা, ম্লান হয়। কেউ কেউ আবার বিষবৃক্ষ রুয়ে রাখে যাতে পরিবর্তিত ভবিষতে ফল পাওয়া যায়।
শেখ হাসিনার সরকার পদ্মা সেতু বানিয়েছে। শুরুতে এনিয়ে এত ঝামেলা করা না হলে সেতুর ইতিহাস ভিন্ন হতে পারতো। কিন্তু যতবেশি জল ঘোলা করা হলো ততই শেখ হাসিনার পাল্লা ভারি হলো। তিনি সাহসিকতার সাথে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানানোর ঘোষনা দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। তখনো বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা কম কটুক্তি করেননি। এখন সেতু দৃশ্যমান।
দেশবাসী পদ্মা সেতুর জন্য গর্বিত। সবাই শেখ হাসিনার প্রসংসা করছে। এতে বিএনপি’র সমস্যা কোথায়। ভাল না লাগলে মুখে কূলুপ দিয়ে রাখলেই হয়। কেন শুধু শুধু লোক হাসানো। বিএনপি’র লোকজনকি এসব তামাশা পছন্দ করে। তারা কি এই সেতু দিয়ে যাতায়ত করবেনা। বরং রাজনৈতিক কারণে হলেও তাদের বলা উচিৎ ছিল, কোনকালে ক্ষমতায় যেতে পারলে তারা আরিচা পয়েন্টে আরেকটি সেতু বানাবে। অন্যের সাফল্যকে ম্লান করতে গেলে নিজেদের জোকার হতে হয়…।
পদ্মা সেতু বানানোর ক্ষেত্রে মোটাদাগে সবাই বলছেন এবং মনে করেন ‘পদ্মা সেতু’ যতদিন থাকবে ততদিন মানুষ এই সেতু সৃষ্টির গল্প ও এর স্রষ্টাকে মনে রাখবে। এটা শান্তনার কথা। ইতিহাস ভিন্ন সাক্ষী দেয়। তাই বাংলাদেশের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্মারক ‘পদ্মা সেতুর’ দুই প্রান্তের প্রবেশ মুখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যুরালসহ দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মান করা যায়। তোরণের খিলানে থাকবে সেতু সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী। যাতে লোকজন সেতুর দিকে যেতে যেতে এর আদ্যোপান্ত সব কিছু জানতে পারে। দুই প্রান্তে একই নকশার সর্বাধুনিক স্থাপত্য শৈলীর তোরণ নির্মান করা হলে সেটিও হবে আরেক বিস্ময়। সৃষ্টি ও স্রষ্টা থাকবে একই বৃন্তে দৃশ্যমান। সেতুর প্রবেশ মুখে দৃষ্টিনন্দন বিশালাকৃতির তোরণে শেখ হাসিনার ম্যুরাল দেখে সবাই বুঝবে তিনিই এর স্থপতি।
এরকম কিছু একটা করা দরকার এজন্য যে, ‘পদ্মা সেতু’ শুধু মাত্র একটি ব্রীজ নয়, একটি ইতিহাস। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দৃঢ়তার স্থাপত্য স্মারক। যুগযুগ ধরে এই স্থাপত্য স্মারকের গল্পকথা স্মরণীয় করে রাখার জন্য দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মান করা হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সর্বস্তরের মানুষ ওই তোরণের সামনে, নীচে বা আশপাশে প্রিয়জনদের সাথে প্রতিদিন শতশত সেলফি তুলে ছড়িয়ে দেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।বিশ্বাবাসী দেখবে সক্ষম ও সম্ভাবনার বাংলাদেশকে।
২৫ জুন ২০২২ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে। উদ্বোধনীর এই বিশাল আয়োজনে যুক্ত থাকবে গোটা দেশ। যুক্ত হবে বিশ্বের সকল প্রান্তের বাঙ্গালী, বাংলাদেশী মানুষ। উদ্বোধণী অনুষ্ঠান দেখবে বিশ্ববাসী। এই মহোৎসবে যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এমন কিছু একটা ঘোষনা করা হলে তাতে জাতির কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটবে। মানুষ খুশী হবে। স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’ বাস্তবে এক স্থাপত্য নিদর্শন হয়ে যুগযুগ ধরে সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে একই বৃন্তে দৃশ্যমান করবে।
লেখক ঃ সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সভাপতি, বিএফইউজে।