|

জাতীয় কবি নজরুলের জন্মদিন আজ

প্রকাশিতঃ ২:৫০ অপরাহ্ণ | মে ২৫, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট, ভালুকার খবর: অসাম্প্রদায়িক বাঙালির প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলাভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অতুলনীয় প্রতিভার স্পর্শে সমৃদ্ধ করেছেন কবিতা ও সংগীতের ভুবনকে। বাঙালির স্বাধীন রাজনৈতিক চেতনা গঠনে নজরুলের অবদান অসামান্য। কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি মানবিক দর্শনে ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাঙালির মনোরাজ্যকে বিকশিত করার প্রধান কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন।

তিনি একদিকে যেমন শ্যামা সংগীত ও কীর্তন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন ইসলামি ভাবধারার গান। তারুণ্যের আবেগ ও বিদ্রোহের চেতনাকে তার মতো করে আর কেউ চিত্রিত করতে পারেননি। তিনি পরিচিত ছিলেন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে।নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালে)। অবিভক্ত ভারতে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামের কাজী পরিবারে। নজরুলের পূর্বপুরুষরা সিপাহি বিদ্রোহে অংশ নেওয়ায় ইংরেজদের বিরাগভাজন হন। এই বিদ্রোহের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল নজরুলের ভেতরে। কাজী ফকির আহমেদ ও জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন নজরুল। ছোটবেলায় তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। ১৯০৮ সালে পিতার মৃত্যুর পর মাত্র দশ বছর বয়সেই রোজগারে নামতে হয় দুখু মিয়াকে। মক্তবের শিক্ষক, মুয়াজ্জিন ও মাজারের খাদেম হিসেবে কাজ করতে হয় তাকে। কিছু দিন পর যোগ দেন লেটোর দলে। লেটোর দলের হয়ে গান বাঁধা ও নাটকে অভিনয় করে চলে কিছু দিন।

রেলের ইংরেজ গার্ডের খানসামা, রুটির দোকানের কর্মচারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে তাকে। রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল, মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরাম স্কুলে বিভিন্ন সময়ে লেখাপড়া করেন তিনি। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে প্রায়ই তাকে লেখাপড়া বন্ধ করে কাজে যোগ দিতে হয়। সিয়ারসোল রাজ স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নজরুল। প্রথম মহাযুদ্ধের সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে থাকার সময়ই নজরুলের সাহিত্যিক জীবনের সূচনা ঘটে।
১৯২০ সালে কলকাতায় ফিরে নজরুল সাহিত্যিক সৃষ্টিকর্মে মনোনিবেশ করেন। ‘বিদ্রোহী’, ‘সাম্যবাদী’ ইত্যাদি কবিতার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন ঝড় তোলেন। বিশেষ করে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পর বাংলার পাঠকসমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এমন দৃপ্ত ও বলিষ্ঠ ভাব ও ভাষাভঙ্গি এর আগে বাংলা সাহিত্যে ছিল অকল্পনীয়। গানের ভুবনেও তিনি নিয়ে আসেন তারুণ্যের নতুন আবহ। নজরুল পত্রিকা সম্পাদনা ও চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ধূমকেতু ও লাঙল পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ব্রিটিশবিরোধী লেখার জন্য কারাবন্দিও ছিলেন। তিনি প্রায় ৩০০০ গান লেখেন। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, দোলন চাঁপা, ছায়ানট, ইত্যাদি তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা তার উপন্যাস। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা ইত্যাদি তার বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ।
তিনি সুগায়ক ছিলেন। ধ্রুব নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ ছিলেন তার বন্ধু। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে নজরুলকে নিয়ে যান মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। নজরুল যেমন রবীন্দ্রনাথকে তার বই উৎসর্গ করেছেন, তেমনি রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত নাটক উৎসর্গ করেন নজরুলকে। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত দুজনের সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অক্ষুণ্য থাকে।
১৯৪২ সালে নজরুল মস্তিষ্কের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। তিনি নির্বাক হয়ে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তিনি তাকে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করেন। ১৯৭৬ সালে নজরুল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
বাঙালির জাতীয় জীবনে নজরুলের সবচেয়ে বড় অবদান হলো তিনি অসাম্প্রদায়িক বাঙালির চেতনায় প্রোথিত করেন স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। তিনি সকল প্রকার বৈষম্য, অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন চিরবিদ্রোহী। তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন তার প্রতিটি রচনায়। তিনি একাধারে প্রেম ও বিদ্রোহের কবি। তিনি লিখেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নজরুলের কবিতা ও গান ছিল প্রেরণার উৎস।
জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
Print Friendly, PDF & Email