|

ভালুকায় টার্কি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে রহমত

প্রকাশিতঃ ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ | জুন ২৭, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্ট, ভালুকার খবর: ময়মনসিংহের সর্বদক্ষিণের উপজেলা শিল্পাঞ্চলের ছোঁয়ায় ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ভালুকা। এক সময় কৃষিই ছিলো এ উপজেলার প্রধান অর্থনৈতিক স্বাবলম্বির পথ। বর্তমানে শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ এ অঞ্চলে খামারের প্রতি ঝোঁক লক্ষ করা গেছে। ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগী পালন করে খামারিরা লাভাবান হলেও টার্কি মুরগী পালন করে খুব দ্রুতই সফলতার মুখ দেখছেন।

বিদেশী পাখি প্রজাতির টার্কি মুরগী পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ভালুকার খামারিরা। পোল্ট্রি মুরগীর চেয়ে টার্কি মুরগীর রোগ-ব্যাধি কম, মাংস খেতে সুস্বাদু ও চাষ লাভ জনক হওয়ায় এই মুরগী পালন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ উপজেলায়। ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খামারিরা বাসা-বাড়ির আঙ্গিনায়, বাড়ির ছাদে, পতিত জমিতে শেড তৈরী করে ছোট বড় ঘর তৈরি করে গড়ে তুলছেন টার্কি মুরগীর ফার্ম।

সরেজমিনে উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া গ্রামের গিয়ে দেখা গেছে, মো: রহমত আলীর তানিয়া টার্কি ফার্ম এ শত শত মুরগী খাবার সংগ্রহে ব্যাস্ত। এই খামারে ছোট টার্কি মুরগী ৪শতাধীক ও বড় মুরগী ৫শতাধীক। ১একর জায়গায় গড়ে উঠা এ খামারে দু‘টি বড় শেড, ঘাস কাটার মেশিন, ডিম ফুটানোর দুইটি ইনকিউভেটর রয়েছে। এখানে ডিম ফোটানো থেকে শুরু করে বাচ্চা উৎপাদন, পালন ,বাণিজ্যিক ক্রয়-বিক্রয় চলছে।

খামারে গিয়ে মালিক রহমত আলীকে মুরগী পরির্চচায় ব্যাস্ত দেখা যায়তিনি জানান, গত ৮মাস পূর্বে ২০টি বড় ও ৩০টি বাচ্চা টার্কি মুরগীর নিয়ে শুরু করেন এই খামার। এখন ৮/৯শত মুরগীর রয়েেেছ তার খামারে। দেড় লক্ষ টাকা খাটিয়ে এ পর্যন্ত ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করেছেন প্রায় তিন লক্ষ টাকা। এখন বিক্রির উপযোগী মুরগী রয়েছে প্রায় ৪লক্ষ টাকার। তিনি টার্কি মুরগী পালন করে সফলতার মুখ দেখছেন বলে এই প্রতিনিধিকে জানান। এর আগে লেয়ার মুরগীর খামার করে প্রথম দিকে লাভের মুখ দেখলেও পরবর্তীতে ক্ষতির আশংকায় তা বাদ দিয়ে টার্কি মুরগীর খামার স্থাপন করেন।
জানা যায়, টার্কি মুগরগীর খুব বেশী রোগ-বালাই নেই।

তবে রাণীক্ষেত, কলেরা, বার্ডফ ও ফক্স এর আগাম ভ্যাক্সিন দিতে হয়। খাবার হিসেবে প্রধানত পতিত জমিতে উৎপন্ন দেশী-বিদেশী ঘাস ও ঘাস জাতীয় সবজি এবং মাঝে মধ্যে বাজারের খাবার দেয়া হয়। অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে ভালুকায় দিন দিন টার্কি পালন বৃদ্ধি পাছে। স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় টার্কি ফার্ম করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এ অঞ্চলের খামারিরা। এর ফলে উপজেলার অনেক বেকার যুবক-যুবতীরাও এখন ঝুঁকছেন এ ব্যবসা দিকে।

এই খামারি বলেন, টার্কি মুরগি রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। ছয় মাসের একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন হয় তিন থেকে চার কেজি। প্রতি কেজি টার্কি মুরগি বিক্রি হয় আড়াই-তিন শত টাকায়। তিনি আরো জানান, ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ২৮ দিনেই এর ডিম ফুটানো যায়। এ ছাড়া বর্তমানে দেশি মুরগির মাধ্যমেও টার্কির ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। একজোড়া টার্কির বাচ্চা বিক্রি হয় ১৪/১৫শত টাকায়। প্রতি পিছ ডিম বিক্রি করেন দেড়/২শ’ টাকায়। তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তার কাছ থেকে টার্কি মুরগি ক্রয় করতে আসেন নতুন খামারি-ক্রেতারা।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: হেলাল আহমেদ জানান, টার্কি আমাদের দেশে একটি নতুন প্রজাতি। বেশ কিছুদিন ধরে টার্কি মুরগী পালন শুরু হয়েছে। উপজেলার জামিরদিয়া, বাটাজোর,কাচিনা,মোহনা,সিডস্টোরসহ বেশকিছু এলাকায় ছোট-বড় খামার তৈরী হয়েছে। ১০/১৫টি বড় খামার ও ২০/২৫টির মতো ছোট খামার গড়ে উঠেছে।

তিনি আরো জানান,  কম খরচে অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হিসাবে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে টার্কি মুরগী চাষে খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আর এ কারণে খামারিরা এখন এ ব্যবসায় বেশি ঝুঁকছেন। প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে সকল টার্কি খামারিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং নিয়মিত সহযোগিতা করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email