উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ হবে না : শেখ হাসিনা
প্রকাশিতঃ ২:৫৭ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮

রফিকুল ইসলাম রনি: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা সরকারের কোনো উন্নয়ন দেখেন না তারা চোখ থাকতে অন্ধ। তাদের মনের দরজা বন্ধ। এ সরকারের ভালো কাজ তাদের চোখে পড়ে না। যারা মানুষ হত্যা করে, গ্রেনেড হামলা করে, অর্থ লুটপাট করে তাদেরই তারা পছন্দ করে। তারা থাকেন কিছু একটা আশায়। যদি কিছু একটা হয়। কিন্তু উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। উত্তরপাড়া থেকে কেউ সাড়া দেবেন না। তাদের কেউ ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন না। এমন মানসিকতা কারোর নেই।
গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, দারিদ্র্য হার কমেছে, শস্য উৎপাদনে আমরা এগিয়ে গেছি। কিন্তু এসব ভালো কাজ তাদের চোখে পড়ে না। শেখ হাসিনা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। মহাকাশে স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করেছি। এসব উন্নয়ন কারও চোখে পড়ে না। বিএনপি মিথ্যাচারে চ্যাম্পিয়ন। তাদের দলের মহাসচিবকে নাকি জাতিসংঘের মহাসচিব আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এমন অপপ্রচার করলেন দেশের ভিতর। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখলাম, জাতিসংঘের মহাসচিব সেসময় ছিলেন ঘানায় কফি আনানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে। জাতিসংঘ থেকে আমাদের বলা হলো, মহাসচিব তাদের আমন্ত্রণ জানাননি। বরং তারাই দেখা করতে চেয়েছেন। এমন নাটক করার দরকার কী, মিথ্যাচার করার দরকার কী? এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এমন মিথ্যাচার, ধোঁকাবাজি, ভাঁওতাবাজিতে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন। এর আগেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন সরকার গঠন করেন তখন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর টেলিফোন আলাপ নিয়ে তারা এমন মিথ্যাচার করেছিল। কেউ অপকর্ম করলে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করলে বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, আমেরিকাতে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এত টাকা তারা পেলেন কোথায়? এর আগে তারা জয়কেও হত্যাচেষ্টা করেছিল। আমেরিকার এফবিআই কর্মকর্তাকে কিনেছিল। এ সময় ষড়যন্ত্রে কারা লিপ্ত ছিল তা সবাই জানে। শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের নাম এ প্রসঙ্গে এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এমডি পদ চলে যাওয়ায় হিলারিকে দিয়ে ইউনূস পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করল। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনল। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। এক ফোঁটা দুর্নীতিও পায়নি। তারেক রহমান এত টাকা পায় কোথায়? বিলাসী জীবনযাপন করে, তিনটা গাড়ি রয়েছে তার। অথচ আমার বোন লোকাল গাড়িতে চড়ে। যারা অর্থ লুট করে, এতিমের টাকা মেরে খায় দেশবাসীকে বলব তাদের পরিহার করুন। যুক্তফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের স্বাগত জানাই। তারা রাজনীতি করুক। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটা প্লাটফর্ম তো থাকা দরকার। কিন্তু অন্য কিছু ভাবলে তাদের আশা পূরণ হবে না। যুক্তফ্রন্ট নিয়ে আরও বলেন, তারা অভিযোগ করেছে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেওয়া হয়নি। আসলে সেখানে আরও কেউ জনসভা করতে চেয়েছিল। তাই হয়তো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ডিএমপিকে বলব, তাদের যেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেওয়া হয়, প্রয়োজনে স্থায়ী একটা মঞ্চ করে দেওয়া হবে যেন তারা ৬০-৭০ জন মিলে গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা করতে পারেন। প্রয়োজনে লোকও দেব। আলোকচিত্রী শহিদুল্লাহর গ্রেফতার সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রথম দুই দিন আন্দোলন খুবই ভালো ছিল। পুলিশ, আমার দলের নেতা-কর্মী, এমপি-মন্ত্রীদের বলেছিলাম— ধৈর্য ধরুন। শিক্ষার্থীরা যা বলে তা শোনুন। কিন্তু এর মাঝে তৃতীয় পক্ষ নেমে গেল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। একজন আঁতেল তো আল জাজিরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিলেন, এখানে নাকি গণহত্যা চলছে। আল জাজিরা ক্ষমা চাইল তাদের ভুল সংবাদ পরিবেশনের জন্য। আবার কেউ ফেসবুকে বললেন, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। তিনি যেখান থেকে বললেন, পেছনে তো অন্য সাইনবোর্ড ছিল। দর্জিপাড়ায় স্কুলড্রেস বানানোর ধুম পড়ে গিয়েছিল, পলাশীতে ভিড় আইডি কার্ড বানানোর। এদের অপপ্রচারের কারণে আমার পার্টি অফিসে হামলা হলো। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হলো। যারা গুজব রটিয়েছে, মিথ্যাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেবই। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়।
মনোনয়ন যারা চান তাদের জন্য আওয়ামী প্রধানের ‘সাফ কথা’ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতি ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই সারা দেশ থেকে আসা নেতাদের তিনি ইলিশ বিরানি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এ সময় তিনি নিজেই রান্না করেন ৪টি ইলিশ। গত রাতে গণভবনে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, সব জায়গায় একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছে। এটা দলের জন্য ভালো। কিন্তু নিজের প্রচারণা করতে গিয়ে বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। এমপির বিরোধিতা করতে গিয়ে মূলত দলের এবং নৌকার বিরোধিতা করছেন কেউ কেউ। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকার জনগণ ভাববে, ‘দুজন আওয়ামী লীগ করে। আবার তারাই একে অন্যের গিবত করে। তার মানে আওয়ামী লীগ খারাপ দল। তাদের ভোট দেওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমার সাফ কথা, বর্তমান এমপির বিরোধিতা যিনিই করুন, তিনি যত জনপ্রিয়ই হোন না কেন, তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আমার কাছে সার্ভে রিপোর্ট আসছে, যেসব এমপির সমস্যা ছিল তারা এখন ভালো করছেন। তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিভাগীয় পর্যায়ে নয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জেলায় জেলায় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। জেলা কমিটি মনিটরিং করবে নির্বাচনী আসন ও উপজেলা এবং ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। তবে বৈঠকে কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের এমন কয়েকজন নেতা জানান, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বিভাগীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করলে দলীয় প্রধান তা নাকচ করে দেন। এরপর প্রতিটি জেলায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠনের পক্ষে বক্তব্য দেন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে সম্মতি দেন। এ ছাড়া প্রতিটি নির্বাচনী আসনে, উপজেলায় এবং কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে।
বৈঠকে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মতিন খসরু, আখতারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন নেতা। বৈঠকসূত্র জানায়, যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশে প্রকাশ্য বক্তব্য ও বিষোদগার করছেন তারা যোগ্য হলেও কোনোভাবেই তাদের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। কারণ এতে এমপিদের সমালোচনা করতে গিয়ে নৌকার ভোট নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভুল ধারণা যাচ্ছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের কোনো সভা-সমাবেশে বাধা না দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে যেহেতু এই জোট গঠিত হয়েছে, আমরা স্বাগত জানাই। তারা কোথাও সভা-সমাবেশ করতে চাইলে করুক, আমরাও দেখি তারা কতজন লোক উপস্থিত করতে পারেন।
সুত্র: বাংলাদেশপ্রতিদিন।