|

দিপু চন্দ্র দাসের সঙ্গে কী হয়েছিল সেদিন: জানা গেল প্রকৃত ঘটনা

প্রকাশিতঃ ২:৫৫ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ২২, ২০২৫

ভালুকা প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাইওনিয়ার নীটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা এবং পরবর্তীতে তার মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

পুলিশ জানায়, গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে কারখানার গেট ভেঙে উত্তেজিত জনতা দিপুকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। পরে মাস্টারবাড়ি এলাকায় ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের সড়ক বিভাজকের একটি গাছে ঝুলিয়ে তার মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

এদিকে দিপুকে হত্যার প্রতিবাদে ময়মনসিংহ জেলা জুড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সচেতন সনাতনী সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠন। মানববন্ধন থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানানো হয় এবং নিহত দিপুর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
ঘটনার কারণ নিয়ে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, প্রাথমিক তদন্তে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শ্রমিকের দাবি, দিপু চন্দ্র দাস ধর্মীয়ভাবে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন, যা থেকে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

পাইওনিয়ার নীটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর কর্মঘণ্টার মধ্যে কারখানার লিংকিং সেকশনে দুই নারী শ্রমিকের কথোপকথনের সময় দিপু ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল মন্তব্য করেন। এতে আশপাশের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

কারখানার পাঞ্চ সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে দিপু কারখানা ফ্লোর ত্যাগ করেন। পরে পুনরায় ফ্লোরে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে নিরাপত্তা পোস্টে নেওয়া হয় এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও ভালুকা থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়।

কিন্তু এরই মধ্যে কারখানার বাইরে উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়ে পকেট গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। পুলিশের উপস্থিতিতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একপর্যায়ে জনতা দিপুকে টেনে নিয়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

পাইওনিয়ার নীটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেডের এডমিন, এইচআর ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার উদয় হোসেন জানান, মানবিক বিবেচনায় নিহত দিপুর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা এবং তার শিশু সন্তানের সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান জানান, ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিপুর পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email