শেরপুরে ইটের প্রাচীরে অবরুদ্ধ ১১ পরিবার
প্রকাশিতঃ ২:৪০ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ০২, ২০১৮

শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নে ১১ পরিবারকে অবরুদ্ধ করে ভূমি অফিসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে পরিবারের অর্ধশতাধিক নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মই দিয়ে সীমানা প্রাচীর টপকে চলাচল করছে। এ ছাড়া একই জায়গায় হিন্দু রবিদাস সম্প্রদায়ের আরও ১১টি পরিবারের যাতায়াতের পথে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসনের এমন আচরণে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে নন্নী ও পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ৫৫৫ খতিয়ানে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে থাকা ভূমি অফিস ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ সময় অফিসের পাশে প্রায় ৬০ বছর ধরে বসবাসকারী ১১টি হতদরিদ্র রবিদাস পরিবার, ইয়াকুব আলীসহ আরও ১১টি পরিবারের বসতঘর ভেঙে সেখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার নির্দেশ দেন এসিল্যান্ড। রবিদাস পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে নালিতাবাড়ীর ইউএনও, শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও সবশেষে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানান। তাদের আবেদন গ্রহণ না করে নির্মাণকাজ শুরু হলে রবিদাস পরিবারের পক্ষে রতন রবিদাস আদালতে কাজ বন্ধের আবেদন করেন। আদালত মৌখিকভাবে নায়েব এসএম মামুন ও জিপিকে ওই স্থানে কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর দেয়াল নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। কিছুদিন পর ভূমি অফিসের পূর্ব ও উত্তর পাশে ইয়াকুব আলীসহ অপর ১১টি পরিবারের যাতায়াতের পথে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাধা দিলেও ঠিকাদার ও সংশ্নিষ্টরা তা না মেনে প্রাচীর নির্মাণকাজ শেষ করেন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ওই পরিবারের সদস্যরা।
অবরুদ্ধ ইয়াকুব আলী বলেন, আমাদের ১১ পরিবারের তিন দিকে অন্যের জমি। তারা তাদের জমি দিয়ে আমাদের যেতে দেয় না। ফলে এক মাস ধরে আমরা অবরুদ্ধ রয়েছি। মই বেয়ে বাড়ির নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রাচীর টপকে যাতায়াত করতে হয়। যাতায়াত করতে গিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রশাসনের কাছে অনেক আবেদন-নিবেদন করেও কোনো ফল পাইনি।
তিনি বলেন, নালিতাবাড়ী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মোকদ্দমা করেছি। বিচারক ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
রতন রবিদাস আরও বলেন, আদালত মৌখিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও আমরা ভয়ভীতিতে আছি। আমরা নিম্নবর্ণের মানুষ, আমাদের দেখার কেউ নেই।
নন্নী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান রিটন বলেন, ওই পরিবারগুলোর কোনো সদস্য মারা গেলে তার মৃতদেহ দেয়াল টপকে আনতে হবে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
নালিতবাড়ীর ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন, ভূমি অফিসের ভেতর দিয়ে যাতায়াতের সুযোগ নেই। এটি একটি স্পর্শকাতর অফিস। নিরাপত্তার বিষয় আছে। আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি, এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে।