রাজধানীর সবচেয়ে বড় মাদকের বাজার জেনেভা ক্যাম্প তছনছ
প্রকাশিতঃ ১২:২১ অপরাহ্ণ | মে ২৭, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট, ভালুকার খবর: র্যাব তছনছ করে দিয়েছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় মাদকের পাইকারি বাজার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ক্যাম্পে তারা অভিযান চালায়। এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করা হয়েছে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় পুলিশের অভিযান। এ ছাড়াও গতকাল ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিহত হয়েছে ১২ জন মাদক ব্যবসায়ী। ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ নামের অভিযানে এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৭৫ জন মাদক ব্যবসায়ী র্যাব-পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৫৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এদের মধ্যে ৭৬ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা এবং ৭৭ জনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে ১৩ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩০ কেজি গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি জানান, পুরো ক্যাম্প ঘিরে তারা অভিযান চালিয়েছেন। বাইরে থেকে কাউকে ভিতরে বা ভিতর থেকে কাউকে বাইরে বের হতে দেওয়া হয়নি। অভিযানে র্যাব-২ নেতৃত্ব দেয়। তাদের সহযোগিতা করে ঢাকার অন্য ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। অভিযানে র্যাবের গোয়েন্দা, ডগ স্কোয়াডসহ তিন শতাধিক সশস্ত্র সদস্য অংশ নেয়। এতে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশগ্রহণ করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার পরে জেনেভা ক্যাম্পের চারপাশ ঘিরে ফেলে র্যাব। পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের ছাদ থেকে উড়ানো হয় ড্রোন। কিছুক্ষণ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর একযোগে চারপাশ থেকে অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানের সময় বিভিন্ন দোকান ও বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেকেই ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ড্রেনে ফেলে দেয়। কিন্তু র্যাবের ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে ময়লার স্তূপসহ বাসা ও দোকান থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে অংশ নেওয়া র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক দিন ধরেই সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। এরপর সার্বিকভাবে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকাস্থ র্যাবের-১, ২, ৩, ৪, ১০ ব্যাটালিয়নসহ সদর দফতরের একটি টিম মিলে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে জেনেভা ক্যাম্পের দুর্ধর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইসতিয়াক, ষোলো ও পঁচিশের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প মাদক বিক্রির অন্যতম স্পট। এখানে অভিযান চালাতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এখানে মাদক বিক্রেতারা এতটাই সংঘবদ্ধ যে, তারা একজোট হয়ে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলাও করেছে। গত ৪ মে থেকে র্যাব এবং ১৮ মে থেকে পুলিশ সারা দেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। কিন্তু এত দিনেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি মোহাম্মদপুরের এই জেনেভা ক্যাম্পে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে অনেক এন্ট্রি পয়েন্ট রয়েছে। ছোট একটি জায়গার মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক লোকের বাস। ভিতরের জায়গাগুলো অনেক সরু। অনেকেই পারিবারিকভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এখানে অভিযান চালানোর সময় বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযানের বিষয় টের পেয়ে অনেকে মাদকদ্রব্য রাস্তায় ফেলে দেয়। জেনেভা ক্যাম্পকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসার বিষয়ে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। সে অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে নারীসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এখানে আরও অভিযান পরিচালনা করা হবে। যেভাবেই হোক মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে যা যা করা প্রয়োজন, র্যাবের পক্ষ থেকে তা-ই করা হবে।
দুই বস্তিতে অভিযান : রাজধানীর বনানী থানা এলাকার সাততলা বস্তি ও কমলাপুর টিটিপাড়া বস্তি এলাকায় ১ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছে ডিএমপি। গত রাত ৮টায় শুরু হওয়া অভিযান রাত সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছিল। এ সময় পর্যন্ত ৫২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, স্পেশাল আর্মড ফোর্স ও ডগ স্কোয়াডের সম্মিলিত দল অভিযানে অংশ নেয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রাত ১১টা পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি ইয়াবা, ৪০ কেজির বেশি গাঁজা ও বিপুল চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত আরও ১২ : পুলিশ ও র্যাবের দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক রাতে আরও অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার দিনগত রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লায় দুজন, দিনাজপুরে দুজন, কুড়িগ্রামে একজন, ঠাকুগাঁওয়ে একজন, চাঁদপুরে একজন, ময়মনসিংহে একজন, জয়পুরহাটে একজন, ফেনীতে একজন, বরগুনায় একজন এবং পাবনায় একজন। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর আগের রাতেও কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন নিহত হয়েছিলেন।