বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে যেসব সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়া যায়!
প্রকাশিতঃ ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ | জুন ১১, ২০১৮

সাখাওয়াত হোসেন সুমন:
আমাদের দেশের যে পরিস্থিতি তাতে বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করার পরই ভালো চাকরির প্রত্যাশা করেন। সাথে সাথে অভিভাবকরাও প্রত্যাশা করে যে তার সন্তান একটা ভালো বেতনের চাকরি করবে। আসলে ভালো বেতনের চাকরি বাংলাদেশে হয়তো প্রাসঙ্গিক, তবে আপনি যে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়বেন তার একমাত্র কারণ যেন শুধুমাত্র ভালো বেতনের আশা করা না হয়। যদি এমনি ভেবে থাকেন তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আপনাকে পস্তাতে হতে পারে। কম্পিউটার সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া খুবই চিত্তাকর্ষক ও আনন্দময়। আর ভালোমতো লেখাপড়া করলে আপনাকে চাকরি খুঁজতে হবে না, চাকরিই বরং আপনাকে খুঁজবে। যা হোক, চলুন দেখে নেয়া যাক কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ে আপনি কী পেতে পারেন।
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির, তাই নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরা বা যেকোনো নতুন সুযোগকে কাজে লাগাতে তথ্যপ্রযুক্তির ছেলেমেয়েরাই এগিয়ে থাকে। নিজেকে তুলে ধরতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারেও তারা অনেক বেশি পারদর্শী হয়। যেকোনো ক্ষেত্রে আপনি আপনার কম্পিউটিং দক্ষতা ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি কম্পিউটার বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত থাকেন তবে এই সেক্টরের পাশাপাশি আরও ভিন্ন কিছু সেক্টরে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। যেমন, ব্যাংক, করপোরেট হাউজ, মিডিয়াসহ সব জায়গাই আজ কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা। কম্পিউটার সায়েন্সের ক্যারিয়ার আরও অন্য ভাবেও হতে পারে যেমন আপনি কম্পিউটার সায়েন্স পড়েন তবে প্রোগ্রামিং শিখুন বা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্টেটর শিখুন এই দুটি আপনার জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে যখন আপনি প্রেক্টিক্যালি শিখতে যাবেন। আবার যাদের আঁকাআঁকির সেন্স ভালো বা পছন্দ করেন তারা গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে খুবই ভালো করতে পারেন। আমাদের দেশে বর্তমানে এমন অনেক ট্রেনিং ইন্সটিটিউট আছে যারা আপনাকে প্রফেশনালি গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপরে প্রশিক্ষন প্রদান করবে।
সুতরাং আপনি যদি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেন তবে আপনার সামনে এমন অনেক পথ পাবেন যেখান থেকে খুব সহজে নিজের পছন্দ মতো একটি পথ বেছে নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। আমাদের দেশের বেকার সমস্যা প্রকট। যথাযথ ডিগ্রি ও যোগ্যতা থাকার পরও অনেকেই চাকরি পান না। অনেকেরই চাকরির জন্য অনেক দিন এমনকি বছরের পর বছরও পথে পথে ঘুরতে হয়। সত্যিকার অর্থে সবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা বর্তমান বাংলাদেশে সম্ভব নয়। এই যখন বাস্তবতা তখন আপনার সামনে আরও একটি পথ খোলা আছে। আপনি একজন কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট হিসেবে খুব সহজেই অনলাইন ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেসে নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এজন্য আপনার দরকার হবে একটি নিদিষ্ট কাজের দক্ষতা। আপনি একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। দেখবেন আপনার বন্ধুদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেসে কাজ করছে এবং সেখান থেকে মোটামুটি ভালো টাকা আয় করছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এটি বেশ ভালো একটি পেশা। এবং এখান থেকে মোটামুটি ভালো আয় করতে পারবেন।
অনেকে আবার নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবেও গড়ে তুলতে পারেন। যুগ যেহেতু এখন তথ্যপ্রযুক্তির, তাই তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক ধরনের নতুন নতুন বিজনেস শুরু করা যেতে পারে। যেমন ধরুন, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরপরই কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে একটা সফটওয়্যার ফার্ম গড়ে তুলতে পারেন। চাকরির সুযোগ যদি আমরা বর্তমান ক্যারিয়ার মার্কেট ও এর ট্রেন্ড বিবেচনায় নেই, তবে দেখব অন্তত আগামী আরো ১৫-২০ বছর কম্পিউটার ক্যারিয়ারের রমরমা অবস্থা বিরাজ করবে। এটা যতটা আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রযোজ্য ঠিক তেমনই বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য। বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ কম্পিউটার সায়েন্সই মনে হয় একমাত্র সাবজেক্ট, যেটাতে পড়ে আপনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই সরাসরি গুগল বা ফেসবুকের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করতে পারেন। ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশী ছাত্র এসব নামকরা প্রতিষ্ঠানে নিজেরদের আসন করে নিয়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কোম্পানি প্রোগ্রামিং কনটেস্ট ও সফটওয়্যার কনটেস্ট আয়োজন করে। প্রোগ্রামিং কনটেস্টে মূলত অলিম্পিয়াড স্টাইলে অ্যালগরিদমের সাহায্যে প্রবলেম সলভ করতে হয়। এখানে সুযোগ আছে সারা বিশ্বের বড় বড় প্রোগ্রামারের সাথে কনটেস্ট করার। বাংলাদেশের মানুষের গর্ব করার মতো জিনিস খুব বেশি নেই, তবে প্রোগ্রামিং কনটেস্ট অবশ্যই সেই অল্প জিনিসের একটা, অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশীরা এসব কনটেস্টে ভালো ফল করছে। সফটওয়্যার কনটেস্টে মূলত বিভিন্ন সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে হয়, মোবাইল বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েড-ভিত্তিক মোবাইলের সফটওয়্যার কনটেস্ট বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। মাইক্রোসফট ইমেজিন কাপের মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার কনটেস্টেও বাংলাদেশীরা অংশ নেয়।
এছাড়া আপনি যদি কোন বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য আছে সুসংবাদ! বাংলাদেশেও অনেক ভাল ভাল আন্তর্জাতিক আইটি কোম্পানি আছে। যারা বিশ্বের বড় বড় আইটি কোম্পানির সাথে কাজ করে থাকে এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে কাজে লাগায় এমনকি বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিতে তাদেরকে কাজের সুযোগ করিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থী – ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং
লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট.
তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক – অভ্যুদয়.
অনলাইন ইনচার্জ – ভালুকার খবর.