স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য পাঠ আওয়ামীলীগ
প্রকাশিতঃ ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ | জুন ২৩, ২০১৮

অধ্যাপক ডাঃ আজিজ:
আজ ২৩ জুন (শনিবার) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। নানা চড়াই-উৎড়াই ও সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে এদিন ৭০ বছরে পা দিতে যাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী দলটি।
দলের এ ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ওয়ান ইলেভেন নামের রাজনৈতিক সিডরের সময়ই সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী চিকিৎসকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে অনড় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে রাজপথের অগ্নিপরীক্ষায় উর্ওীন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)মহাসচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনে রের্কড ভোটে নবনির্বাচিত সিনেট সদস্য ও ময়মনসিংহ সদর আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী চরাঞ্চলের বন্ধু অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ।
তৃণমূল ছাএলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা অধ্যাপক ডাঃ এমএ আজিজ ১৯৮২ সালে ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ৮৩ ও ৮৪ সালে প্রথমে এ সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনীতির কন্টকাকীর্ণ নানা পথ মাড়িয়ে এখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামীলীগপন্হী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব হিসেবে।
দলকে ভালবেসে, দলের ও সংগঠনের জন্য নিজেকে শতভাগ উজাড় করে দিতেই ২০১১সালের ৪জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে শুধুমাত্র দলের ভালবাসাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এমন আন্তরিক মানসিকতার জন্যই সংগঠনের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ রিলেশন স্হাপন করতে পেরেছেন বলে জানান দেশের এ শীর্ষ চিকিৎসক নেতা।
জনসেবা-মানবসেবায় নিজেকে নিবেদিত করা তিন শব্দের ছোট্র এক নাম এম.এ.আজিজ। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭০ বছরে পর্দাপণ উপলক্ষ্যে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ প্রতিনিধিকে বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাস হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আজকের এই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।
তিনি বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ সৃষ্টির এই ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য পাঠ হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। যে দলটির নেতৃত্বেই এসেছে স্বাধীনতার লাল-সবুজের পতাকা।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানে পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’।
মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতা-কর্মীরা এক রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে দলটি গঠন করেন। দলটি প্রতিষ্ঠার প্রায় চার বছর পর ১৯৫৫ সালে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে ‘আওয়ামী লীগ’ নামে বাঙালির লড়াই-সংগ্রামের অসাম্প্রদায়িক এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে এই আওয়ামী লীগ।
প্রথম সম্মেলনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হক হন সাধারণ সম্পাদক। ওই কমিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
পরবর্তী পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৬৬ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই দলটি বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের শাসন-নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের আন্দোলনই এক পর্যায়ে রূপ নেয় স্বাধীনতার সংগ্রামে।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রসর হয় দলটি। ৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দীর্ঘ সময় দেশে একের পর এক সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে দলটি।
এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি ও ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
এরপর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বের এই শূন্যতা থেকেই দলের মধ্যে ভাঙন, গ্রুপিংসহ বহু ধারায় বিভক্তি দেখা দেয়।
দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তার নেতৃত্বে দলটি এগিয়ে যাচ্ছে।
এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ।
তবে ৬৯ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই দলটিকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করলেও তা বেশি দিন টেকেনি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে এই দল। এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালেও সরকার গঠন করে বর্তমানে ক্ষমতাসীন রয়েছে দলটি।
লেখক: মহাসচিব, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ।