সত্যিই কি মানুষ মানুষের জন্য?
প্রকাশিতঃ ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ | জুলাই ১৪, ২০১৮

আহসান হাবীব বাপ্পীঃ
তোমার বিপদটা আমি বুঝতে পাচ্ছি করিম মিয়া কিন্তু কি করবো বলো?? এই যে মসজিদটা নির্মাণ করছি এখানে আমার প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। এটা আমার নিজের উদ্যেগে এলাকার মানুষের জন্য করা, তাছাড়া এর বাইরে আশেপাশে বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, গীর্জা নানা প্রার্থনালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাকে টাকা পয়সাতো দিতেই হয় এতোসব ম্যানেজ করে চলাটা চাট্টিখানি কথা নয় করিম মিয়া। যাগগে এই নাও এখানে হাজার খানেক টাকা আছে, আল্লাহ – আল্লাহ করো জন্ম মৃত্যু সবই তাঁর হাতে। কথাগুলো বলছিলেন ধনাঢ্য ব্যাক্তি আমজাদ হোসেন।
কোটি কোটি টাকার মালিক তিনি। শহরে তার নানা রকমের বড় বড় ব্যবসা। এলাকায় দানবীর মহামানব হিসেবে পরিচিত। এলাকার খেটে খাওয়া গরীব মানুষ করিম মিয়া। একমাত্র ছেলে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত। করিম মিয়ার ছেলেটা পড়ালেখায় খুব ভালো। এ বছরই এস এস সি দেয়ার কথা। করিম মিয়ার আশা ছেলেটা পড়ালেখা করে মানুষ হয়ে সংসারের হাল ধরবে তার দুঃখের দিন একদিন শেষ হবে। কিন্তু সব আশা কি পূর্ণ হয়??
এ দ্বারে ও দ্বারে এর কাছে তার কাছে চোখের জল মুছতে মুছতে ছেলেটার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করে করিম মিয়া। ৫ টাকা ১০ টাকা ১০০ টাকা করে এভাবে কিছু টাকা করিম মিয়া ভিক্ষে করে জমায়। কিন্তু ছেলেটার চিকিৎসার জন্য যে অনেক টাকা দরকার এতো টাকা কোথায় পাবে?? তবে কি ছেলেটাকে বাঁচাতে পারবেনা? করিম মিয়ার আদরের মানিক বুকের ধন কি এভাবে চোখের সামনে ধুঁকে ধুঁকে মরে যাবে? বোবা কান্নায় করিম মিয়ার বাকরুদ্ধ হয়ে আসে দরিদ্র সংসারে এখন শুধুই আহাজারি… যদি সবার উপরে মানুষ সত্য হয়, যদি মানব ধর্ম বড় ধর্ম হয়, যদি মানুষের সেবা বড় সেবা হয়, মানুষের সেবা করলে যদি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় মানুষকে ভালোবাসলে যদি আল্লাহকে ভালবাসা হয় তবে বলুনতো একটা মানুষের চাইতে কি মসজিদ, মন্দির, গীর্জা কোনো প্রতিষ্ঠান বড় হতে পারে?? কখনোই না..দয়া করে কেউ আমাকে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা বিদ্বেষী ভাববেন না। অবশ্যই দরকার আছে , আমি বলছি মানুষের কথা, মানুষ বেঁচে থাকলে তো এ সব কিছু বেঁচে থাকবে। মানবের মাঝেই যেহেতু সৃষ্টিকর্তার বসবাস সেহেতু মানুষের সেবা করাটা কি সৃষ্টিকর্তার সেবা করা নয়?? সমাজের তথাকথিত দানবীররা নিজস্ব ফায়দা লুটার জন্য এরকম ধর্মীয় প্রার্থনালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করে অথচ একটা মানুষকে বাঁচাবার জন্য একটা পরিবারকে বাঁচাবার জন্য একজন করিম মিয়াকে বাঁচাবার জন্য আমজাদ সাহেবদের তখন টাকা পয়সা থাকেনা আর থাকলেও সেটা অংকে খুবই কম, নগন্য।
বিশ্বাস করুন এই অর্থের কোনো মূল্য নেই যে অর্থ মানুষের কল্যাণ বয়ে আনেনা যে অর্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনা সে অর্থ শুধুই অনর্থ। আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের দৈনিক হাত খরচ দুই লাখ টাকা এরকম অনেক মালিকের ছেলে আছেন যাদের প্রতিদিন খরচ তারও বেশী। একটু চিন্তা করুনতো যদি ১০ টা দিনের হাত খরচ ঐসব অসহায় করিম মিয়াদের হাতে তুলে দেয়া যেতো তবে পুরো পরিবারটা হয়তো চোখের জলে ভাসতোনা…. দুনিয়াটাই হয়তো এরকম কারও পৌষ মাস কারও বা দুঃখে কষ্টে জীবন নাশ। কারো বাড়িতে বিয়ার গীত আবার কারও বাড়িতে মরা কান্নার রোল।
“ভালুকার খবর” পত্রিকায় পড়ছিলাম, ভালুকাতে মা মেয়েকে বই কেনার টাকা দিতে পারেনি বলে দীপা আক্তার বন্যা নামে একটি মেয়ে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে। সত্যি এই ধরনের খবর আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তোলে, নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করে। অথচ আমরা জানি ভালুকাতে দানবীরের কোনো অভাব নেই। শেষ করবো ভুপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানটি দিয়ে..মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা ও বন্ধু…… আসুন না এই কথাটাকে বুকে লালন করে এসব অসহায় করিম মিয়া এবং বন্যাদের পাশে দাঁড়াই বাড়িয়ে দেই ভালোবাসার হাত।
লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব