১০ মিনিটের আগুনে পুড়ে ছাই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চ
প্রকাশিতঃ ৫:০৭ অপরাহ্ণ | জুলাই ২২, ২০১৮
স্টাফ রিপোর্ট, ভালুকার খবর: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাস থেকে: “আমরা তখন জব্বারের মোড়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি সমাবর্তনের মাঠ থেকে ধোঁয়া উঠছে। কৃষি অনুষদের করিডোরের সামনে এসে দেখলাম আগুনের কালো ধোঁয়া কুণ্ডুলি পাকিয়ে আকাশে উড়ছে। কোনকিছু আর অবশিষ্ট রইলো না। মুহূর্তেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেলো!”
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ৫৭তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানের মঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কৃষিবিদ হাতেম আলী এভাবেই বলছিলেন।
শনিবার (২১ জুলাই) দিনগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপ-পরিচালক দীন মোহাম্মদ দীনু বলেন, “ঘণ্টাখানেক আগে আতশবাজি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিলেন।
কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই প্যান্ডেলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। মাত্র ১০ মিনিটের আগে সব পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই গোটা প্যান্ডেল পুড়ে ছাই!”
এই ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা জানাতে পারেননি এ দুই প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭তম বর্ষপূর্তির আগের রাতে এমন অগ্নিকাণ্ডে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিথর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪ হাজার ৩শ’ গ্রাজুয়েটের উদযাপনের আনন্দে মেতে ওঠার কথা থাকলেও সর্বনাশা আগুন তাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে।
তবে সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠান আয়োজনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর।
নিজ বাসভবনে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যেই আমরা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পুনরায় শুরু করেছি। দুপুর ২টায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নুল আবেদিন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান হবে। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার অ্যালামনাইরা বসতে পারবেন। বাকীরা প্রদর্শনীর প্যান্ডেলে বসবেন। বড় প্রজেক্টরের মাধ্যমে তাদের অনুষ্ঠান দেখানো হবে।”
এটি পরিকল্পিত কোন নাশকতা না কি নিছক অগ্নিকাণ্ড এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, “এটা নাশকতা হতে পারে না। তবে কিভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটলো তা আমরা তদন্ত করে দেখবো। শিগগির বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আপাতত আমরা অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতেই কাজ করবো।”
শনিবার দিবাগত রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে অনুষ্ঠানস্থলের প্যান্ডেলে আকস্মিকভাবে আগুন লাগে। প্যান্ডেলে ৫ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্যান্ডেলের ভেতরের চেয়ার-টেবিল, চারটি এলইডি স্ক্রিন পুড়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি বলে জানান কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রহমান জানান, আমাদের ৬ টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ময়মনসিংহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ময়মনসিংহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. নায়েরুজ্জামানকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন- পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাছ উদ্দিন ভূঞা। তারা তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে।
জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তাই জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।


