|

ভালুকার হারেছ‘র সিঙ্গারার কদর তিন যুগের

প্রকাশিতঃ ১:৫১ পূর্বাহ্ণ | জুলাই ২৩, ২০১৮

 স্টাফ রিপোর্ট, ভালুকার খবর:  ভালুকার পৌরসভাবাসীর কাছে হারেছের সিঙ্গারার কদর রয়েছে প্রায় তিন যুগ ধরে। মানুষ হালকা নাস্তা হিসেবে বেশিরভাগই ভাজাপোড়া খাবারকেই বেছে নেয়। আর সেই হালকা নাস্তা যদি হয় হারেজের ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গারা তাহলে তো কথায় নেই। পূর্ণতা আসে নাস্তায়।

উপজেলার রাংচাপড়া গ্রামের মৃত আবুল কুমারের ছেলে হারেছ কুমারের একমাত্র আয়ের উৎস এই সিঙ্গারার দোকান। পৌর সদরের শাপলা সিনামা হলের সামনে জড়াজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে হারেজের সিঙ্গারর দোকানের বয়স ৩২বছর। সেই থেকে তাঁর সিঙ্গারার কদর এখনও রয়েছে বেশ বহাল তবিয়তে। কথিত রয়েছে হারেজের ২টাকার সিঙ্গারার স্বাদ আর কোথাও মেলাতে পারেনি ভালুকাবাসী।

১৯৮৬সাল থেকে ১টাকা করে সিঙ্গারা বিক্রি করেন হারেছ। তখন ১টাকার সিঙ্গারাও ছিলো বেশ বড়। এখন দাম ২টাকা কিন্তু সিঙ্গারা ছোট।
যুগ বদলেছে টাকার মান কমেছে কিন্তু বদলায়নি হারেছের ভাগ্য। ২টাকার সিঙ্গারা বিক্রি করেই চলে তাঁর এক ছেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রীসহ ৫ জনের সংসার। শরীর ভালো থাকলে হারেছ সারাদিনে ১হাজার বা কিছু বেশি সিঙ্গারা বানাতে পারে। এ বিক্রির লাভেই চলে তাঁর সবকিছু।

এলাকার শিশু যুবক মহিলা বয়োবৃদ্ধসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিরাও হারেজের সিঙ্গারার জন্য লাইন ধরে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে আপোসহীন হারেছ নিজ হাতে একাই সবকিছু করেন। সকালে দোকান খোলার পর পরই সরগরম হয়ে ওঠে হারেজের সিঙ্গারার দোকান। তার তৈরি করা সিঙ্গারা “হারেছের পিচ্চি সিঙ্গারা” নামে পরিচিত। আলু শিদ্ধ বাদামসহ নানা রকমের মসলার তৈরি এ সিঙ্গারা।

মো. হারেজ কুমার বলেন, ইচ্ছা করেই ব্যবসাটা পাল্টাইনা। কেননা আমাকে এই এলাকার মানুষ খুব আদর করে। আমি যতœ করে একাই সিঙ্গারা তৈরি করি। অনেকসময় চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে কুলিয়ে উঠতে পারিনা। একটি মাত্র চুলায় ৬০-৮০টা সিঙ্গারার বেশি দেওয়া যায়না।
বড় চুলা বসানো ও সহকারী নিয়োগ না করার কারণ জানতে চাইলে হারেছ বলেন, আমার সিঙ্গারা যারা খায় তারা সবাই আমার পরিচিত। লোক রাখলে সে সবাইকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও যতœ করে খাওয়াতে পারেনা। পরিচিতদেরকেই আমি ঠিক মত সিঙ্গারা খাওয়াতে পারিনা। নিজ হাতে মানুষকে খাওয়ালেই আত্মতৃপ্তি পাই। হয়তো এ কারণেই সবার কাছে আমার সিঙ্গারা প্রিয়।

হারেজের নিয়মিত সিঙ্গারা ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম ও মাহাবুবুর রহমান স্বপন জানান, সকালে নাস্তার পর দুপুরে খাওয়ার আগে বা বিকালে হারেছের সিঙ্গারা না খেলে কেমন জানি একটা অপূর্ণতা থাকে। হারেছ খুব আন্তরিক ভদ্র বিনয়ী ছেলে। সে অনেক বছর যাবৎ আমাদের এ সিঙ্গারা খাইয়ে আসছে বলেই হয়তো এটার প্রতি একটা মায়া জন্মে উঠেছে আমাদের। অনেকসময় তো আমারাও এসে সিঙ্গারা পাই না। অপেক্ষা করে খেতে হয়।
ভালুকা ফিস ফিড লিঃ এর ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন মানিক জানান, হারেছ কাকার মত স্বাদের সিঙ্গারা আমি আর কোথাও পাইনা। কাকার যতœ করে খাওয়ানো ও বিনয়ী হাসিটাও আর কোথাও মেলে না। ভালুকার বাইরে থেকে আমার কাছে কোন মেহমান আসলে আমি চেষ্টা করি হারেছ কাকার বিখ্যাত সিঙ্গারা খাওয়াতে। কেননা আমি যাদেরকেই এই সিঙ্গারা খাইয়েছি তারা সবাই এই ২টাকার সিঙ্গার খুব প্রশংসা করেছে। শুধু আমার কাছেই নয় গোটা ভালুকাবাসীর কাছেই এ সিঙ্গারার রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ।

২নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় কাউন্সিলর মুখলেছুর রহমান মুকুল জানান, আমি হারেজের সিঙ্গারার নিয়মিত কাস্টমার। এই সিঙ্গারা আমার দিনে ২ থেকে ৩ বার খাওয়া পরে। কেননা আমার কাছে কেউ আসলে অনেক সময় এই সিঙ্গারা খাওয়ানোর আবদার রাখে তাই তাদের সাথেও আবার আমার খাওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email