|

জীবনের ক্যমেরা নির্মল প্রেমের জয়গান গিয়েছিল তবু কেনো এই হামলা?

প্রকাশিতঃ ৮:৩৪ অপরাহ্ণ | জুলাই ২৪, ২০১৮

পীর হাবিবুর রহমান:

পূর্বপশ্চিম নিউজ পোর্টালের ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ একজন সৃজনশীল পরিশ্রমী কর্মী। এই নিউজ পোর্টালের দায়িত্ব পালনকালে তাকে অনেক স্নেহ দিয়েছি। তার অনুসন্ধিৎস্যু মন দিয়ে চমৎকার ছবি তুলে নিয়ে আসে।

তারুণ্যের শক্তিই হলো প্রেম। যুগে যুগে কিশোর-কিশোরী, তরুন-তরুনী এককথায় দুই মানব মানবীর হৃদয় আকুল করা প্রেম জগতের চিরন্তনী সত্যে উদ্ভাসিত হয়েছে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে। প্রেমের আকুলতায় রাজ সিংহাসন পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়ার ইতিহাস যুড়ে যুগে দেখা গেছে। বীর যোদ্ধা থেকে লেখক, কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক রাজনীতিবিদ শুরু করে জগৎ শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের জীবনেও প্রেম এসেছে গভীর আবেগ অনুভূতি নিয়ে। প্রেমের জন্য রাজদন্ডও ভোগ করেছেন অনেকে। প্রেমের শক্তি এতটাই অপ্রতিরুদ্ধ যে,  প্রেমিক যুগলের বন্ধন পরিবার-সমাজ কখনো ছিন্ন করতে পারেনি। প্রেমের কাছে নত হতে হয়েছে বারবার।

হৃদয় নিঃসৃত আবেগ অনুভূতি থেকে উৎসারিত প্রেমের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, একালেও প্রিয়জনকে না পাবার বেদনায় আত্নহননের পথ বেছে নিতে দেখা যায় প্রেমিক-প্রেমিকাকে। প্রেমের সুন্দরের পূজারী সেই যে আপাদমস্তক মানবিক মানুষ। যৌন বিকারগ্রস্থ বিকৃত ধর্ষকদের কাছে প্রেম মূল্যহীন হলেও মানুষের কাছে মানবতার চোখে এক অপার সৌন্দর্যের মহিমা। প্রেমের বিরহ বেদনা আনন্দ ও নির্মল সৌন্দর্য মিলিয়ে মহাকাব্য রচিত হয়। চিত্রকর্ম থেকে সেলুলয়ের ফিতায় যুগে যুগে প্রেম ঐশ্বর্যমন্ডিত শোভা পেয়েছে। পৃথিবীতে কম মানুষই আছেন যার জীবনে বা মনের গভীরে বিপরিত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ হয়নি। মনের গহিনে কারো ছায়া পড়েনি। আসেনি মধুর প্রেম। প্রেমহীন জীবন যেমন বর্ণাঢ়্য হয়না তেমনি বহমান জীবনে শক্তি ও গতির উৎসের সন্ধান পায় না।

বর্ষায় বা শ্রাবন আষাড়ে বৃস্টির ধারা নেমে এলে প্রকৃতি মানব মনকে আকুল করে দেয়। প্রেমিক হৃদয়ের চিত্ত ব্যকুল করে তোলে। কবি গুরুর ভাষায় ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়’। প্রেমিক প্রেমিকা একে-অপরকে গভীর আবেগে কাছে পেতে চায়। মন খুলে খুনসুটি গল্পে মেতে উঠকে চায়। সমাজ অনেক বদলেছে। অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। প্রেমিক যুগল সাহসী হয়েছে। তারুণ্য জানে চির সুন্দরের প্রেমে কোনো পাপ নেই। নির্মল ভালবাসার আবেগ নির্ভর বন্ধনে, একে-অপরকে চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে অহংকারের গৌরব লুকিয়ে আছে। লজ্জা গ্লানি প্রেমিক নর-নারীর জন্য নয়। যৌন বিকৃত ধর্ষকদের জন্য। সমাজের নষ্ট মানুষ দেখলে লজ্জিত হতে হয়। ঘৃনা জাগে মনে। নির্মল ভালবাসায় সিক্ত প্রেমিক যুগলকে দেখলে অপার সুন্দরের আহবানে মুগ্ধ হতে হয়। একটি সুন্দর বাগান, সবুজ পাহাড় গোধূলী লগ্নের বহমান নদী কিংবা অস্তমিত সূর্যের সামনে দাড়িয়ে সমুদ্র দর্শন যে আনন্দ দেয় তার চেয়ে কম আনন্দ নেই প্রেমিক যুগলের হেটে যাওয়া দৃশ্যে।

সোমবার কাকভেজা বৃস্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসির ফুটপাতে এক প্রেমিক যুগল কাছাকাছি হয়েছিল বৃস্টিতে ভিজতে ভিজতে। এখনো মুষলধারে বৃস্টি নামলে ভিজতে ইচ্ছে করে। বৃস্টি ভেজা পথে হেটে যেতে ইচ্ছে করে। সেখানে প্রিয়জনকে নিয়ে বৃস্টিতে ভিজতে বা হেটে যেতে কার না মন টানে? টিএসসির প্রেমিক যুগল প্রেমে মগ্ন হয়ে তাবৎ জগৎ সংসারের সবমোহ ভুলে নিশ্বাপ নিস্বকাম মন নিয়ে পরস্পরকে চুমু খেয়েছিলেন। পূর্বপশ্চিমের ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ সেই তরুন প্রেমিক যুগলের মন আনন্দ করা চুমু খাওয়ার সুন্দর ছবি ক্যমেরা বন্দি করেছিলেন। সেই ছবি ভার্চুয়াল জগতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পক্ষে-বিপক্ষে মন্তবের ঝড় উঠে। যাদের মুখে দুর্গন্ধ, চুমু ভাগ্য জুটেনি, হৃদয় প্রেমহীন, জীবনে আসেনি প্রেমের সুখ, হিংসার অনলে পুড়ে তারা বিরুপ মন্তব্য করেছেন। প্রেমের সৌন্দর্য প্রবন মানবিক প্রেমিক হৃদয়ের মানুষেরা একে অভিনন্দিত করেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন। জীবনের ক্যমেরা প্রেমের জয়গান গেয়েছে।

যুগলের চুমু খাওয়ার ছবিটি বারবার আমি দেখেছি। বারবার মুগ্ধ হয়েছি। এখানে কোনো অন্যায় বা পাপ দেখিনি। মনে হয়েছে কতদিন এমন সুন্দর ছবি যেমন দেখিনি তেমনি দেখিনি নির্মল প্রেমিক যুগলের এমন আবেগ ঘন ছবি। মঙ্গলবার জীবন টিএসসি এলাকায় গেলে এ নিয়ে কেউ কথা বলেনি। কিন্তু তার দু’তিন জন ফটো সাংবাদিক সহকর্মী নিজেদের ব্যর্থতার গ্লানিতে লজ্জায় ডুবে গিয়ে আক্রোশে ফেটে পড়েছেন। জীবনের উপর হামলা করেছেন। পেশাদারিত্বের জায়গা কলংকিতই করেননি নিজেদের কাপুরোষিত নগ্ন চরিত্রকে উন্মোচিত করেছেন। এই ঘটনার নিন্দা জানাই। এই হামলার বিচার চাই। আর চাই তারুণ্যের প্রেমের জয় হোক। প্রেমের জয় অনিবার্য। পৃথিবী জুড়ে প্রেমের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ুক। প্রেম সবার মনের কালিমা দূর করুক। প্রেমে প্রেমে সকল নারী-পুরুষ সুখী হোক।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

 

Print Friendly, PDF & Email