|

ঝিনাইগাতীতে বেদে সম্পদায়ের অস্তিত্ব সংকটে

প্রকাশিতঃ ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮

শেরপুর প্রতিনিধি: আমাদের বাপ, দাদারা এ ব্যবসা করছে। এহন আমরাও পাইছি। এহন আর মানুষ আমাদের খেলা, শিঙা লাগানো, তাবিজ-কবজ নিতে চায় না। বর্তমানে অবস্থা ভালো না। আমাদের কোন ক্ষেত-গৃহস্তের জমিজমা নেই, ব্যবসায় নামলে খাইতে পারি। যেতক্ষণে ব্যবসা করি অতক্ষণে ভাত খাই। আর নাইলে নাই। খুব কষ্ট করে জমিটুকু কিনে কোন রকম একটা ঘর তোলা হয়ছে।

এছাড়া এমন কোন ক্যাশ নাই যে বিপদআপদে পড়লে টান দিয়ে চলমু। এহন আর ভাল লাগে না এ ব্যবসা। এ ব্যবসা করে বাল-বাচ্চাদেরকেও মানুষ করতে পারি না।’ কথাগুলো শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের ডেফলাই গ্রামের বেদে পল্লীতে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে খুব আক্ষেপ করে এভাবেই বলছিলেন বেদেনী ইনসিনা বেগম (২৮)। তিনি ওই পল্লীর বেদে ঝনকা মিয়ার স্ত্রী।

ওই পল্লীতে দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এ বেদে সম্প্রদায়ের স্থায়ী ও অস্থায়ী ভাবে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। একসময় তারা নানা ধরনের অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার নামে টোককা, শিঙা লাগানোর নামে অপচিকিৎসা, সাপ-বানর খেলা করে মানুষের কাছ থেকে আয় করত। কিন্তু আধুনিকযুগে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ার ফলে বেদেনির্ভর অপচিকিৎসা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই তাদের আয়ও কমে গেছে। একারণে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এখন কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত।

ওই বেদেপল্লীতে দেখা যায়, বেদেপল্লীতে ব্যাপক হইহুললুর আর চেচামিচিতে ভরপুর। ছোট্র শিশু দু-তিনজন গলায় সাপ পেঁচে বসে আছে। আবার কয়েকজন একত্রিত হয়ে গল্পে ব্যস্ত। সাংবাদিক এসেছে শুনে শিশুরা দৌড়ে একত্রিত হল। পাশা-পাশি বেদে-বেদেনীরাও আসল।
বেদে গিয়াস, সাদ্দাম, ইমনসহ অনেকেই জানায়, এ আধুনিকযুগে মানুষ তাদের এখন আর বিশ্বাস করে না। তাবিজ-কবজও কিনে না, পানিতে স্বর্ণ-রোপা হারিয়ে গেলে তা উদ্ধারেও তাদের খোঁজে না। সাপ-বানর খেলা দেখায়ে কোন রকম কষ্টে করে জীবিকা চলে তাদের। তবে বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ। তারা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

বেদে সর্দার মো. জামাল উদ্দিন জানায়, বেদে সম্পদায়ের অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তির পথে ক্রমেই
তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বেদেদের নতুন প্রজন্ম আর তাদের পুরনো পেশায় থাকছে না। তারা নতুন নতুন পেশা বেছে নিচ্ছে। সুযোগ পেলে তিনিও এ পেশা ছেড়ে দিবেন।

Print Friendly, PDF & Email