|

সশস্ত্র ভয়ঙ্কর বাহিনী

প্রকাশিতঃ ২:৪২ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮

মির্জা মেহেদী তমাল: গুলশান-১ নম্বর শাখার একটি ব্যাংক থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা উত্তোলন করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টস অফিসার আবুল বাশার। টাকা উত্তোলনের পর তিনি অন্য দুটি কোম্পানির নামে কিছু টাকা পে-অর্ডার করেন। অবশিষ্ট ৪ লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে সহকর্মী ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্যাংক থেকে বের হন তারা। শুটিং ক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন গুলশানে নিজেদের অফিসে। ক্রিস্টাল প্যালেস ভবনের সামনে পৌঁছামাত্র তাদের পাশে থামে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস। গাড়ি থেকে নামে ৩ যুবক। হাতে ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও বেতের লাঠি। তারা নিজেদের ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে বাশার ও ফিরোজকে মাইক্রোবাসে উঠায়। গাড়ির মধ্যে চোখ বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। এরপর ৪ লাখ ১১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দেয় হাতিরঝিলের ১ নম্বর পানির পাম্পের সামনে। পরে বাশার বুঝতে পারেন ওরা আসল নয়। নকল ভয়ঙ্কর বাহিনী। এমন ভয়ঙ্কর বাহিনী শুধু রাজধানীতেই নয়, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা দেশে। পুলিশের মতোই তাদের সোর্স রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। ডিবির ডিসি, এডিসি, এসি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাই আছে। আছে অস্ত্র, ওয়াকিটকি, ডিবি জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফসহ গাড়ি। এ এক ভয়ঙ্কর চক্র। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তারা সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে জিম্মি করে। পরে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। ভুক্তভোগীদের কয়েকজন পুলিশের কাছে গেলে তদন্তের পর বেরিয়ে আসে এই ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্রের জাল। চক্রটি পুলিশের সব সরঞ্জাম ব্যবহার করে ডিবি পরিচয়ে ভয়ঙ্কর প্রতারণা করে আসছে।

রাজধানীতে দফায় দফায় গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালানোর পরও যেন কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না ভুয়া ডিবি পুলিশের তৎপরতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির পরও দেদার চালিয়ে যাচ্ছে ভুয়া ডিবি সেজে ওই চক্রের ডাকাতি-ছিনতাই। প্রায় প্রতি মাসে ওই চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হচ্ছে। তবুও থামছে না ভুয়া ডিবির ভয়ঙ্কর তৎপরতা। এসব চক্রের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য খোলাবাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক ও বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রি করাকে দায়ী করেছেন খোদ পুলিশ কর্মকর্তারা। সম্প্রতি প্রথমে রামপুরা এলাকা থেকে নয়জন ভুয়া গোয়েন্দা পুলিশকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের একটি দল। তারা হলেন— মো. জুয়েল রানা, মো. ইয়াসিন, মো. বাদল, মো. মোমেন আলী, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. ফিরোজ, সৈয়দ মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ আলী এবং মো. সবুজ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি ওয়াকিটকি, তিনটি ডিবির জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। একই সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের অপর একটি গোয়েন্দা দল পৃথক অভিযানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কনভেনশন সেন্টারের সামনে থেকে সাত ভুয়া পুলিশকে আটক করে। আটকরা হলেন— মো. লিটন খাঁন, মো. বাবলু মিয়া ওরফে আকাশ, মো. মনির হোসেন, মো. ছাইদুর রহমান, মো. মনির হোসেন, মাহমুদুল হাসান মুন্না এবং মো. আফজাল হোসেন ওরফে শাহিন। এ ছাড়া বনশ্রী ও রমনা এলাকা থেকে এমনই একটি চক্রের ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি বলছে, তারা ভুয়া ডিবি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি খেলনা পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড গুলি, দুটি চাপাতি, চারটি ছুরি, দুটি ওয়াকিটকি, তিনটি ডিবির জ্যাকেট, দুটি হ্যান্ডকাফ, দুটি বেতের লাঠি, একটি ব্যাগ, দুটি ডিবি স্টিকার, তাদের ব্যবহূত দুটি কার ও দুটি মাইক্রোবাস, এক জোড়া হাতকড়া, ১৭টি অব্যবহূত প্রিপেইড মোবাইল সিম, সাতটি মোবাইল সেট, একটি আর্মি জ্যাকেট, একটি কাঠের লাঠি, একটি স্টিলের স্টিক, এক জোড়া বুট, তিনটি পেনড্রাইভ, একটি কার্ডরিডার, একটি স্টিলের নেমপ্লেট ও পুলিশের মনোগ্রাম-সংবলিত একটি খালি আইডি কার্ডের কভার উদ্ধার করা হয়।

সুত্র: বাংলাদেশপ্রতিদিন।

Print Friendly, PDF & Email