‘ভিপি মনি’ থেকে ‘এমপি মনি’
প্রকাশিতঃ ১:২২ অপরাহ্ণ | জুন ০২, ২০১৯

মো. আসাদুজ্জামান সুমন, ভালুকার খবর: রাজনীতিবিদ বাবার কন্যা হিসেবে জনসেবা করার ইচ্ছা থেকে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি। দৃঢ়চেতা নেতৃত্বে টানা ৩ বার ভিপি পদে দায়িত্ব পালন। জন্মভূমির সেবা করার প্রত্যয় থেকে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন, রেকর্ড সংখ্যাক ভোটে টানা ২বার দায়িত্ব পালনে সফলতা। ক্লিন ইমেজ ও অসাধারণ নেতৃত্বগুণের অধিকারী হওয়ায় জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক থাকা অবস্থায় সংরক্ষিত নারী (ময়মনসিংহ) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া। সফল রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ফলে নারী নেতৃত্বের এক উদাহরণে পরিণত হয়েছেন তিনি।
বলছিলাম, ভাষা সৈনিক ও সাবেক সাংসদ ময়মনসিংহের ভালুকার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা এম.এম মতিনের কন্যা মনিরা সুলতানা মনি এমপি‘র কথা। বাবার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই জনসেবা ও ইতিবাচক রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছেন বলে ভালুকার খবরের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এ নারী সাংসদ। তাঁর বাবা মোস্তফা এম এ মতিন মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনের কাতার থেকে। বৃহত্তর ময়মনসিংহে ভাষা সৈনিক হিসেবে গণমানুষের অন্তরে শ্রদ্ধার পাত্রের স্থান দখল করেছিলেন ভালুকার এ কৃতি সন্তান। বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণ ও সকলের আস্থাভাজন হওয়ায় ১৯৭০ এর নির্বাচনে বাংলাদেশ আ‘লীগ থেকে নৌকার টিকিটে বিপুল ভোটে গণ-পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন বীরত্বের সাথে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সাথে। পরবর্তীতে আবার সংসদ সদস্য ও সংবিধান প্রনেতা কমিটির অন্যতম সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বর্ষিয়ান এ নেতা।
সংসদ সদস্য হয়ে সমৃদ্ধ ভালুকা গড়ার প্রত্যায় নিয়ে শুরু করেছিলেন বিভিন্ন কার্যক্রম। নিজের টাকায় জমি কিনে করেছিলেন তৎকালিন ভালুকা কলেজ (বর্তমানে ভালুকা সরকারী কলেজ) ও সরকারী হাসপাতাল (বর্তমানে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র)। নিজের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ডসহ অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজের ভীত স্থাপনের মূহুর্তে বাংলাদেশ হয়ে যায় অভিভাবক শূন্য। মীরজাফরেরা খুন করে বাংলার রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তৎকালীন সেনা শাসকেরা বাকশাল কায়েম করে উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের বাঘা-বাঘা নেতাদের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক পন্থায় দমিয়ে রাখে। দীর্ঘসময় আ‘লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকার ফলে নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আসে। বয়সের ভারে নজু হয়ে আসে বহু প্রভাবশালী নেতা। পুত্র সন্তানবিহীন ৫কন্যার জনক ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা এম এ মতিনের নাম হয়তো একদিন তলিয়ে যাবে এ আশংকা করেছিলো অনেকেই। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ময়মনসিংহের মুমিনুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের ভিপি নির্বাচিত হয়ে সকলের ওই ভ্রান্ত ধারনাকে ভেঙে দেন তাঁর ৪র্থ কন্যা বর্তমানে ক্ষমতাসীন আ‘লীগ থেকে নির্বাচিত সংরক্ষিত নারী (ময়মনসিংহ) আসনের সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি।
বাবার মতই সফল রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ফলে গোটা ময়মনসিংহে সফল নারী নেতৃত্বের উদাহণ হয়ে উঠেছেন ভালুকার এ কৃতি সন্তান। তিনি টানা ৬বছর ময়মনসিংহের মুমিনুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের ভিপি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সুনামের সাথে। ময়মনসিংহ জেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্বে ব্যাপক সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। রেকর্ড সংখ্যাক ভোটে টানা ২বার ভালুকা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বর্তামানের এ নারী সাংসদ। জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে তৃণমূল থেকে উঠে আসা গোটা বাংলাদেশের স্বল্প সংখ্যক নারী নেতৃত্বের মাঝে এখন মনিরা সুলতানা মনিও একজন বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনীতিবিদগণ।
সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনির বলেন, ‘আমার বাবার অসমাপ্ত কাজ করতেই রাজনীতিতে এসেছি। বাবার উপদেশ ছিলো ভালুকার মানুষের সেবা করার। ময়মনসিংহ জেলা শহরে বড় হয়েছি বলেই সেখানে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। জননেন্ত্রী শেখ হাসিনার যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও তাঁর হাতকে শক্তিশালী করতে আমি সদা প্রস্তুত রয়েছি। বাবার অবর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মতেই নিজেক পরিচালনা করতে আমি বদ্ধ পরিকর। নেত্রী আমার উপরে বিশ^াস ও আস্থা রেখে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। আমার মাধ্যমে আ‘লীগ ও সরকারের কোন প্রকার ক্ষতি ও ভাবমূর্তি নষ্ট যেন না হয়, সেজন্য আমি আমার পরিবার, আত্বীয়স্বজনসহ রাজনৈতিক কর্মীগণকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি। সকলের দোয়ার আমৃত্যু মানুষের পাশে থেকে সেবা করতে পারাটাই আমার শেষ ইচ্ছা’।