ত্রিশালের এমপি হতে চায় যারা
প্রকাশিতঃ ৫:১১ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ০৪, ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক ত্রিশালঃ চলতি ২০১৮ ইং সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একাদশ তম (১১ তম) নির্বাচন। আসন্ন ওই নির্বাচন নিয়ে বিগত ২০১৭ সালের মাঝামাঝি হতেই সারাদেশের সকল আসন এলাকার আনাচে-কানাচে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আগাম আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার আসনগুলোতেও তার কোন ব্যতিক্রম নেই। জেলার ১৩টি উপজেলায় ১১টি আসনের সবগুলোতেই বিভিন্ন দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে ভোটার সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চললেও ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে আলোচনার রূপ-চিত্র ভিন্ন। উপজেলা হেডকোয়ার্টার সহ ত্রিশালের প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম-বাজার সর্বত্র ভোটার জনতার মুখে মুখে এক আওয়াজ-এক আলোচনা-এক প্রশ্ন ‘আসন্ন ১১ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্রিশাল আসনে কে নির্বাচিত হবেন? গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নের পাশাপাশি ত্রিশালবাসী চিন্তিতও বটেন। কারণ স্বাধীনতার পর জাতীয় নির্বাচন-গুলোতে কেহই দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে পারেন নি।
ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন অফিসের রেকর্ড থেকে জানা যায়, আওয়ামীলীগ তথা দেশ প্রেমিক জনগন অধ্যুষিত ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনটিতে স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৩ ইং সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্রিশাল সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আওয়ামীলীগ মনোনীত অধ্যক্ষ আবদুল রশিদ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ ইং সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্রিশাল সদর ইউনিয়নেরই বাসিন্দা বিএনপি মনোনীত এডভোকেট আবুল মনসুর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য স্বাধীনতার আগে তদানীন্তন পাক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়ার শাসনামলে ১৯৭০ ইং সালের নির্বাচনেও এডভোকেট আবুল মনসূর আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়নে পাকিস্তান পার্লামেন্টের মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ ইং সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানীখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা আওয়ামীলীগ মনোনীত আবদুস সালাম তরফদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ ইং সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কানিহারি ইউনিয়নের বাসিন্দা জাতীয় পার্টি মনোনীত আনিসুর রহমান মানিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামী তিনি। ১৯৯১ ইং সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বালিপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বিএনপি’র মনোনিত আবদুল খালেক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ইং সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানীখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা বিএনপি’র মনোনীত মহবুব আনম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মাত্র ৮ মাসের মাথায় একই সালের (১৯৯৬ ইং) ১২ জুন অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্রিশাল সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আওয়ামীলীগ মনোনীত আলহাজ্ব হাফেজ মাঃ রুহুল আমিন মাদানী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ ইং সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আওয়ামীলীগ মনোনীত আবদুল মতিন সরকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ ইং সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লার কসবার স্থায়ী বাসিন্দা বর্তমানে ত্রিশালের ধানীখোলায় জমি কিনে বহুমুখী খামারগড়ে তোলে বসবাসকারী আওয়ামীলীগ মনোনীত এডভোকেট রেজা আলী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ ইং সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়নের বাসিন্দা জাতীয় পার্টি মনোনীত আলহাজ্ব আবদুল হান্নান (বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ মামলায় জেল হাজতে) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচন অফিসের এই রেকর্ড থেকে স্পষ্ট জানা গেল স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া ১০ বারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫ বারই আওয়ামলীগ, ৩ বার বিএনপি ও ২ বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হন। কিন্তু নির্বাচিত এমপি গনের কেহই দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে পারেন নি। আসন এলাকার বিভিন্ন স্থান, হাট-বাজার দোকান-পাট, ক্লাব-সমিতিতে বসে আড্ডা দিয়ে আলাপ-আলোচনা শুনে বুঝা গেছে এপর্যন্ত নির্বাচিত এমপিগন কেহই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে মাইকিং করে লিফলেট ছেড়ে প্রচার-প্রচারনায় দেয়া ওয়াদা সঠিকভাবে পালন করেননি। প্রান্তিক জনগনের উন্নয়ন বা হিতকর কাজ তেমন হয়নি। নির্বাচিত এমপিগন সর্বদা নিজেদের কল্যানেই ব্যস্ত ছিলেন বলে সর্বস্তরের জনগন অভিমত প্রকাশ করেন। আসন্ন ১১ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অতীতের কথা ভেবে-চিন্তেই ভোট দেবেন। তারা ত্রিশালে দেশ প্রেমিক, জনগন প্রেমিক, সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকে এমপি নির্বাচিত করতে চান। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় ১৪ জন দৌড়-ঝাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এলাকার সর্বত্র জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এঁদের মধ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামলীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেতে ছুটাছুটি করছেন সাবেক এমপি এডভোকেট রেজা আলী, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য সাবেক এমপি আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আবদুল মতিন সরকার, ময়মনসিংহ জেলা বার এর বর্তমান সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সার্বিকদিকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব এডভোকেট মোঃ জালাল উদ্দিন খান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল আলম পাঠান (মিলন পাঠান), ত্রিশাল পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছ, ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আবুল কালাম, জেলা কৃষকলীগের সাবেক সদস্য, বইলর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সামাজিক সংস্থা কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ শাহাদাত হোসেন বাবুল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয় পেতে ছুটাছুটিতে আছেন-কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ত্রিশাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডাঃ মাহবুবুর রহমান লিটন, ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ জয়নাল আবেদীন, উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আমিন সরকার। জাতীয়পার্টি (জাপা)’র লাঙ্গল প্রতীকের মনোনয়নের প্রত্যাশায় ছুটছেন ত্রিশাল উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ আবদুল মজিদ, সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুরুজ আলী মন্ডল। এই আসনটিতে বর্তমান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের নামও শোনা যাচ্ছে।