নজরুলের মান রাখলেন ফুলপুরের ঊর্মিলা ভৌমিক
প্রকাশিতঃ ৩:২৪ অপরাহ্ণ | মে ৩০, ২০১৮

সজীব আহমেদ:
‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’ বরাবরের মতো এবারও আয়োজন করল ‘আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃৃতিক প্রতিযোগিতা ২০১৭-১৮।’ এই প্রতিযোগিতার গান, নাচ, নৃত্য ও যন্ত্রসংগীতের বিষয়গুলোর চূড়ান্ত পর্ব হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আর বক্তৃতা, আবৃত্তি ও অভিনয়ের বিষয়গুলো হয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মোট ১৮টি বিভাগের এই আসরে সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করা ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন। এবার নজরুলসংগীত ও ভক্তিমূলক গানে প্রথম হয়েছেন ঊর্মিলা ভৌমিক। সে পড়েন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ভক্তিমূলক গানে টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ঊর্মিলা ভৌমিক। ফলে এবারও যে ভালো করবেন সেই বিশ্বাসটি তাঁর ছিল। তাঁদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের নোটিশ বোর্ডে এই প্রতিযোগিতার কথা নোটিশ আকারে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংগীত বিভাগের শিক্ষকরাও আলাদাভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের ডেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেভাবেই ভক্তিমূলক গান ও নজরুলসংগীতে নাম লেখালেন তিনি।
খুব ভালো গায়িকা; সব ধরনের গান গাইতেই ভালো লাগে, তবে নজরুলের নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়, চারদিকে তাঁর স্মৃতিচিহ্নগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে; ক্যাম্পাসের আয়োজনগুলোতে তাঁর গানগুলোই বেশি গাইতে হয়—এসব কারণে তিনি নজরুলসংগীতে নাম লেখালেন। ছোটবেলা থেকেই তো ভক্তিসংগীত গাইছেন। চলতে-ফিরতে গুনগুন করে নজরুলের ‘নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে’ ও ভক্তিসংগীত ‘মন চল নিজ নিকেতনে’ গেয়ে নিজেকে তৈরি করেছেন। নজরুলের রাগপ্রধান গানটি বিভাগের শিক্ষক আশিক সরকারের সাহায্যে আত্মস্থ করেছেন। প্রতিযোগিতার কয়েক দিন আগে হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছেন। বছরখানেক আগে গানে দীক্ষাগুরু বাবা বিমলেন্দু ভৌমিককে হারিয়েছেন বলে যখনই গান গেয়েছেন তাঁর কথা মনে পড়েছে। তিনি বলতেন, ‘মা ভালো করে গাও—একদিন তুমি অনেক বড় শিল্পী হবে।’ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাছাইপর্ব হলো। সেখানে বিভাগের সবাই খুব ভালো গাইলেন। অন্যতম বিচারক ও তাঁদের সংগীত বিভাগের প্রধান ড. রশীদুন্নবী আগের দুবারের চ্যাম্পিয়ন এই ছাত্রীটি গাওয়ার সময় তাঁর গান থামিয়ে হেসে বলে ফেললেন—‘মা, আর বিপদে ফেলিস না।
আমরা কাকে রেখে কাকে বাদ দেব?’ এই কথার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মান রাখার জন্য সংকল্পবদ্ধ হলেন তিনি। ফাইনালের আগে দিন-রাত অনুশীলন করেছেন। চূড়ান্ত পর্বে এসে আর সবার মতো তাঁরও স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছিল। বারবার মনে হচ্ছিল, ‘কেমন গাইব, ভালোভাবে গাইতে পারব তো?’ এরপর তো সেরাই হলেন। তবে এই অর্জন নয়, ঊর্মিলার ভালো লেগেছে—তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ জন প্রতিযোগী ও তাঁদের শিক্ষকরা এসে থেকেছেন, বিভিন্ন অনুষদের অডিটরিয়াম প্রতিযোগিতার সময় ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। আগের দুবারের প্রতিযোগিতায় নানা বিষয়ে প্রথম তিনের মধ্যে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে দেখাও হলো। সাফল্যের পেছনে ঊমির্লা বিভাগের সব শিক্ষক ও গুরু তাঁর বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন। মা ও দাদার কথাও বলতে ভুললেন না। এর আগেও তিনি অনেক সাফল্য লাভ করেছেন।
২০১৫ সালে তরুণ জনসেবাকর্মী ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’-এর ‘কালচারাল অ্যাচিভার’ হয়েছেন। পর পর দুই বছর—২০১৫ ও ২০১৬ সালে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় ময়মনসিংহে প্রথম হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা আয়োজন, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীতে গেয়েছেন। এ বছর থেকে বাংলাদেশ বেতারে নজরুলসংগীতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হয়েছেন। লেখাপড়ার বাইরে নিয়মিতভাবে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। তা ছাড়া গানের দল ‘সপ্তসুর’ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আকাঙ্ক্ষা ফাউন্ডেশন’র হয়ে কাজ করছেন, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের অন্যতম কর্মী ও অনলাইন পত্রিকা ‘বাংলা কাগজ’ পাঠক ফোরামের সদস্য। যাঁরা সংগীত নিয়ে লেখাপড়া করছেন তাঁদের জন্য তাঁর পরামর্শ—‘ভালো কিছু করার আগ্রহ ও প্রচেষ্টা থাকলে সফল হবেই।’ ঊর্মিলা পড়েন মাস্টার্সে।
সুত্র: কালের কণ্ঠ।