|

গফরগাঁও থেকে ভালুকা আসা দীপালির আজ দিন ফিরেছে

প্রকাশিতঃ ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ | জুন ০৬, ২০১৮

মোখলেছুর রহমান মনির: ছোটবেলায়ই মা-বাবাকে হারান গফরগাঁও সদরের রাজিয়া খাতুন দীপালি। নানির কাছে মানুষ। এসএসসিতে ইংরেজি পার হতে পারলেন না। বিয়ে হয়ে গেল। চাকরির চেষ্টায় ঘুরলেন কিছুদিন। তারপর মিষ্টির প্যাকেট বানাতে বসলেন। কষ্ট তাড়াতে অবশ্য আরো অনেক দিন গেল। চুরানব্বই কী পঁচানব্বই সালের কথা। দীপালি রাস্তায় হাঁটছিলেন। ধারে একটা মিষ্টির প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখে তুলে নেন হাতে। ভাঁজগুলো ভালো করে খেয়াল করেন। কাগজের ঠোঙা বানানো তাঁর আয়ত্তে আছে। ভাবলেন, মিষ্টির প্যাকেট বানাবেন। একজনের কাছ থেকে খবর নিয়ে উঠে পড়লেন ট্রেনে। গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহ গেলেন। শ্রীগুরু বান্ডেল নামের প্যাকেট তৈরির কারখানা খুঁজে বের করলেন। ওখান থেকে কিনলেন ১৫ টাকার কাগজের বোর্ড ও মার্বেল কাগজ।

বাড়ি ফিরে

বাড়ি আসার আগেই কাগজ কেটে নিয়ে এসেছিলেন। পরে বোর্ড আর কাগজে আঠা লাগিয়ে তৈরি করতে থাকলেন মিষ্টির বাক্স। গফরগাঁও বাজারে নিয়ে গেলেন বাক্সগুলো। তিন হাজার টাকা পেলেন। গফরগাঁও বাজারের মিষ্টির দোকানদার মন্টু পাল তাঁকে সাহায্য করেছিলেন তখন। আরেকজনের নামও করলেন দীপালি—সাইকেল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। এরপর কয়েক দফায় মাল কিনে মিষ্টির প্যাকেট তৈরি ও বিক্রি করলেন। একসময় মন্টু পাল পরামর্শ দিলেন কালিয়াকৈর যেতে। সেখানে কিছুটা সস্তায় বোর্ড। দীপালি কালিয়াকৈর থেকে ২৫ হাজার টাকার মাল এনে ব্যবসা করতে থাকেন। এরপর ১৯৯৭ সালে চলে আসেন ভালুকায়। সঙ্গে স্বামী, ছেলে-মেয়ে, সংসার আর ব্যবসা।

ভালুকায় এসে

এক হাজার ২০০ টাকায় বাসা ভাড়া নিলেন। পরিবারের সবাই মিলে মিষ্টির প্যাকেট বানাতে থাকেন। দিন দিন ব্যবসা বড় হতে থাকে। ভালুকা কৃষি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি কাটার ও একটি দাগ দেওয়ার মেশিন কেনেন। পরে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে প্রথম দফায় এক লাখ, দ্বিতীয় দফায় দুই লাখ এবং সর্বশেষ পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা আরো বড় করেন। এখন দীপালির দুজন নিয়মিত কর্মচারী। মৌসুমে কর্মচারীর সংখ্যা বাড়াতে হয়। এখন দীপালি ভালুকা ছাড়াও মিষ্টির প্যাকেট সরবরাহ করেন ভালুকা, গফরগাঁও আর ত্রিশালেও। তাঁর তিন সন্তান। এইচএসসি পাস করিয়ে বড় মেয়ে মাহমুদা আক্তারের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে শান্ত বিএ পড়ছে।  ছোট মেয়ে স্নেহা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।

এখন সুদিন

কর্মচারীরাই মূলত এখন সব কিছু করে। বাসার কাজকর্ম সেরে মাগরিবের নামাজের পর দোকানে যান দীপালি। দোকানিরা অর্ডার করেন মোবাইলে। মাল পৌঁছে দিয়ে আসে কর্মচারীরাই। বছর কয় আগে এক একর জমি কিনেছেন। আকাশমণি গাছ লাগিয়েছিলেন। সে গাছ বিক্রি করে জমির দাম উঠে গেছে। ঘরের আসবাবও বানিয়েছেন কিছু। দীপালির কর্মচারী মফিজ উদ্দিন জানান, মাস শেষে ভালোই রোজগার হয়। সংসার চালাতে কষ্ট হয় না। ভালুকা বাসস্ট্যান্ডের রাজলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক দীলিপ চন্দ মোদক জানান, দীপালি একজন আদর্শ ব্যবসায়ী। সে কথা রাখে। দীপালির ইচ্ছা একটি প্যাকেজিং কারখানা করার। সেখানে অনেক মানুষের কাজের সুযোগ হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ।

Print Friendly, PDF & Email