|

সমঝোতা নয় সৌহার্দ্যেই শেষ হলো সংলাপ

প্রকাশিতঃ ১:৪১ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ০৮, ২০১৮

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি:

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গতকালের দ্বিতীয় দফা সংলাপও ছিল প্রাণবন্ত ও খোলামেলা। পারসন টু পারসন কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ড. কামাল হোসেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সবার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রায় চার ঘণ্টার আলোচনায় চলে দুই পক্ষের নেতাদের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি। বৈঠকের শুরুতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন লিখিত প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে ছিল নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, ১০ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনকালীন সরকার গঠন। তবে আওয়ামী লীগ এসব প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। জবাবে তারা বলেছে, এটা সংবিধানসম্মত নয়। এতে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে আর এ সুযোগে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোনোভাবেই সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। ফলে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপেও দুই পক্ষ বিরোধ মিটিয়ে একমত হতে পারেনি। সংলাপ শেষ হলো কোনো সমাঝোতা ছাড়াই সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনায়। বৈঠকে উপস্থিত উভয়  পক্ষের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু হয় বেলা ১১টায়। বিরতিহীনভাবে তা চলে বেলা ২টা পর্যন্ত। বৈঠকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হো?সেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহ?সিন মন্টু, দলের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধু?রী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দলের উপদেষ্টা এস এম আকরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। অন্যদিকে ১৪-দলীয় জোটের নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, দলের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ১ নভেম্বর গণভবনে প্রথম দফায় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্টের ২০ জনের প্রতিনিধিদল সাত দফা দাবি নিয়ে সংলাপে অংশ নেয়। আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা।

বৈঠক শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা ভালো হয়েছে। আলোচনা আরও চলবে। আর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপ শেষ হয়েছে। তবে চাইলে ভোট প্রস্তুতি ও আলোচনা চলতে পারে। তবে তাদের দাবিমতো অসাংবিধানিক কোনো কিছু মেনে নেওয়া হবে না। সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হলে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চার প্রস্তাবের জবাবে যা বলল আওয়ামী লীগ :

নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দাবি ছিল নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এর জবাবে সরকারি দলের নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হতে যাচ্ছে। সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে। যদি প্রধানমন্ত্রী আস্থাভোটে হেরে যান অথবা অন্যকোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে। সেই অবস্থা হয়নি। সংসদের অধিবেশন শেষ হয়েছে। স্পিকার ঘোষণা করেছেন, আর অধিবেশন বসবে না। সংসদ এখন নিষ্ক্রিয়, এমপি পরিচয়ে কেউ কাজ করতে পারবেন না। নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না। মন্ত্রীরা ফ্ল্যাগ ব্যবহার করতে পারবেন না। কাজেই সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

অন্ধকারজগতের লোকদের প্রবেশ করার সুযোগ দেব না : সংসদ ভেঙে দেওয়ার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন। যদি পেছানো হয়, তাহলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। আর এই সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হলে অন্ধকারজগতের লোকেরা ঢোকার সুযোগ পাবে। এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ব্যারিস্টার মওদুদকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি তো দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। আপনি কি চান আবার তারা আসুক? আবার জুলুম-নির্যাতন করুক? আবার জেলে যান?’ ড. কামালকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে চাইছেন, এর আগে এসে আমাকে জেলে ঢুকাল। দুই নেত্রীকে মাইনাস ফর্মুলায় গেল। এবার এই সুযোগ দেওয়া হবে না।’

খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে : জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে যে দাবি জানান, সে বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর তো সুযোগ নেই। সাজা হয়ে যাওয়ার পর তা প্রত্যাহার করা যায় না। আর মামলা তো আমরা দিইনি। মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আমি তো কোনো মামলায় ধরাইনি। সাজাও দিইনি। আর এ মামলা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। এ মামলা যিনি করেছিলেন তিনি তো আপনাদের আপনজন। আপনাদের জোটেই আছেন। তাকেই তো জোটে নিয়েছেন? এখন আমার কী করার আছে? যা হওয়ার আইনের মধ্য দিয়েই হবে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আইন-আদালতের বিষয়। আমার এখানে কোনো হাত নেই।’

ইসি পুনর্গঠন : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ বেশ কয়েকজন ইসি পুনর্গঠন নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর সম্পূর্ণ এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতির। নির্বাচন কমিশনে তো আমাদের সুপারিশ করা লোক মাত্র একজন। সেটা হলো কবিতা খানম। আর বাকিগুলো অন্যদের প্রস্তাবিত কমিশনার।’

১০ সদস্যের উদেষ্টা পরিষদ গঠন : এ প্রসঙ্গে জবাব দেন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার পর তত্ত্বাবাধয়ক ব্যবস্থা আনার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই আইনগত ব্যবস্থা নেই। কোর্ট রায় দিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে বর্তমান সংবিধানের ব্যবস্থা সাংঘর্ষিক। যেটা বাতিল করে দিয়েছে, সেটা কীভাবে নিয়ে আসব?’ তিনি বলেন, ‘ধরে নিন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েই আসলাম। সেই সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচন নিয়ে যদি কেউ একজন হাইকোর্টে রিট করেন, বলে যার ক্ষমতাই ছিল না সরকার গঠন করার, সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে ফলাফল সেটাও অবৈধ, তাহলে কী হবে? পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনী সব মামলার রায় নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হবে।’ এ সময় ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ কোনো উত্তর দেননি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মওদুদ বলেন, ‘আইনের কথা বললে অনেক পয়েন্ট আসবে। তবে আমরা একটা সমাঝোতায় পৌঁছাতে পারি।’

১১ জনের ৯ জনই আওয়ামী লীগ করতেন : গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ নেতা সংলাপে নেন। এর মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সুব্রত চৌধুরী ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

যেভাবে সংলাপ শুরু এবং নেতাদের নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী : সংলাপের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সাত দফা দাবি দিয়ে গিয়েছিলাম। আজ শুনতে এসেছি আপনি কী বলেন।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা একটু বলুন, আরেকবার শুনি।’ এ সময় ড. কামাল হোসেন দাবিগুলো আবার তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী কিছু না বললেও পর্যায়ক্রমে এ নিয়ে কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম। তারা প্রত্যেকেই বলেন, ‘আপনারা ঘুরেফিরে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথাই বলছেন। এটা সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান মন্ত্রিসভাই নির্বাচনকালীন সময়ে থাকবে।’ একপর্যায়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংসদ ভেঙে দিলে সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে। আপনারা কি অন্ধকারে ফিরে যেতে চান? তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। আমরা অসাংবিধানিক কোনো সরকার চাই না।’ এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা যে প্রস্তাব দিচ্ছি তা সংবিধান মেনেই। এখানে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি বাড়ি যেতে পারি না। পুলিশ দিয়ে আমার বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হয়। এটা কি গণতান্ত্রিক আচরণ?’  এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন আমাদেরও একই অবস্থা হয়েছিল। এটা কি আপনারা ভুলে গেছেন?’ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নো, আমরা কখনো এমনটা করিনি।’ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনিও তো আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। আব্বার সঙ্গেই থাকতেন। সব সময় আমাদের বাড়িতে থাকতেন। কত দেখতাম আপনাকে। আপনি হানিফ ভাইয়ের পিএস ছিলেন।’ জবাবে মওদুদ বলেন, ‘না, আমি বঙ্গবন্ধুর পিএস ছিলাম।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন জাতীয় পার্টিতে। জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে।’ কথা ওঠে গুলশানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের আগের বাড়ি নিয়েও। সেটা দখল করে রাখা হয়েছিল বলে ওবায়দুল কাদের জানান। হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘না, আপনি (মওদুদ) জালিয়াতি করে বাড়িটি নিয়েছেন। মালিকের ছেলেরা এসে অভিযোগ করেছে।’ জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দখল করিনি।’ এ সময় টিপ্পনী কেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাড়িটি নিয়ে আপনি ভাইয়ের নামে দিলেন। হাসনার (মিসেস মওদুদ) নামে লিখে নিলেও বিবেচনা করা যেত। বলতাম, কবি জসিমউদ্দীনের মেয়ের বাড়ি।’ হাসতে হাসতে মওদুদ বললেন, ‘ফেরত দিয়ে দেন, হাসনার নামে দিয়ে দেব।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘আপনাকে বিশ্বাস করা যায় না।’

আ স ম আবদুর রবকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি চৌমুহনী কলেজের ভিপি যখন ছিলেন, তখন আমি ইডেন কলেজের ভিপি ছিলাম।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভালো লিখতে পারে বলে আমাদের দলে নিয়ে এলাম। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বানালাম। কিন্তু আমাদের পক্ষে কোনো কথা লিখতে পারে না। এখন আবার গেছে ওই দিকে। এখন আমার বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তৃতা করে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আপা, মান্না তো খালেদা জিয়ার জন্য জীবন দিয়ে দিতে চাইছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন জীবন দিতে হবে?’ জবাবে মান্না বলেন, ‘নেত্রী, আমি জীবন দিতে চাইনি। বেশি লোক হয়ে গিয়েছিল তো, তাই…।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘না, খুব বেশি লোক হয়নি।’ মান্না বলেন, ‘নেত্রী, আমি বঙ্গবন্ধুর স্পিডটা ধরে রাখছি।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব বলে লাভ হবে না। নির্বাচনে আসো। এখানে যারা আছেন, ফখরুল সাহেব ও সুব্রত চৌধুরী ছাড়া সবই আমার লোক।’ এ সময় মান্নাকে উদ্দেশ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তোমরা তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কিছুই চাও না। দেখলাম তোমার গরম বক্তৃতা।’ জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমার এই বক্তব্য তো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। আপনারা তো সেই ব্যবস্থা করছেন না। আপনারা পাল্টা অভিযোগ করছেন। সভা-সমাবেশ থেকে গ্রেফতার করা হবে না বলেও গ্রেফতার-হয়রানি অব্যাহত রয়েছে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, ‘আর কোনো গ্রেফতার-হয়রানি হবে না। গায়েবি মামলা হবে না।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনসুর, কত ব্রিলিয়ান্ট ছিলি। তোরে ছাত্রলীগের সভাপতি বানালাম। ডাকসুর ভিপি বানানোর জন্য জাসদের সঙ্গে ঐক্য করলাম। এখন তোর হাত-পা বড় হয়ে গেছে। একবার বাকশালে যাস, আবার বিএনপিতে যাস। এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি চাস!’ নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান নাগরিক ঐক্যের নেতা এস এম আকরাম হোসেনকে বলেন, ‘আপনি কবে আমার দল ছাড়লেন সেটাই তো জানলাম না?’ এ সময় উপস্থিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শারীরিক খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মির্জা ফখরুল তার শারীরিক অবস্থা জানান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়াসহ যে কোনো প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Print Friendly, PDF & Email