|

টেনশনে বিএনপি প্রার্থীরা

প্রকাশিতঃ ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ১৯, ২০১৮

মাহমুদ আজহার: টেনশনে ঘুম হারাম বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে সবাই এখন ঢাকায়। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে শুরু হয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার। পাশাপাশি লবিং-তদবিরেও ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অনেকেই। দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। যেখানে আশ্বাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন, সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। যে কোনো মূল্যে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক চাই-ই তাদের। দলের প্রভাবশালী নেতাদের বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে দৌড়ঝাঁপ করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। লন্ডনেও যোগাযোগ করছেন অনেকেই। কেউ কেউ যাচ্ছেন লন্ডনে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার আশা করছেন তারা। এরই মধ্যে অনেকেই সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।

জানা যায়, প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপি অন্তত তিনজনকে সবুজ সংকেত দিয়ে রাখছে। মামলা, ঋণখেলাপি কিংবা অন্য কোনো কারণে কারও প্রার্থিতা বাতিল হলে দ্বিতীয়জনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে বিএনপি। ওই প্রার্থীও কোনো কারণে নির্বাচন না করতে পারলে তৃতীয়জনকে বেছে নেবে বিএনপি। তবে হেভিওয়েট ছাড়া প্রায় প্রতিটি আসনেই ৪-৫ জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছে বিএনপি। বিএনপি জানায়, ৩০০ আসনেই তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করে রাখবে। এরপর ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকেও পৃথকভাবে তাদের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা চাওয়া হবে। এরপর কোন কোন আসনে বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে জোট ও ফ্রন্টের প্রার্থী যোগ্য তা নিয়ে পৃথকভাবে বৈঠক করে তাদেরও বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও নিজেরা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে। সব মিলিয়ে জোট ও ফ্রন্টকে ৬০-৭০টি আসন ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। চলতি সপ্তাহে সব দলেরই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। তবে এখনই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে না। আগামী সপ্তাহে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা এখন প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছি। জোট ও ফ্রন্ট পৃথকভাবে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে। তবে এখনই আমরা তালিকা ঘোষণা করছি না। মনোনয়নপত্র জমা ও যাচাই-বাছাই পর্যন্ত সময় আছে।’

সাক্ষাৎকার শুরু : নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়েছে। গতকাল প্রথম দিনে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সংসদীয় আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত দলের মনোনয়ন বোর্ড। মনোনয়ন বোর্ডে লন্ডন থেকে স্কাইপিতে সংযুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎকার শুরু হয়। মধ্যাহ্ন বিরতি দিয়ে সাক্ষাৎকার চলে মধ্যরাত অবধি। প্রথম ধাপে রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে ১৭১ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনে ৩৬৮ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। জানা গেছে, আসনভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডেকে একসঙ্গে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। মনোনয়ন বোর্ডের তিনটি প্রশ্ন ছিল সবার জন্য। এগুলো হচ্ছে—কেন দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আন্দোলন-সংগ্রামে তার অবদান কী এবং মনোনয়ন দিলে জয়লাভ করার সম্ভাবনা কতটুকু। তারেক রহমান নিজেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। পরে এক আসনে সব প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়, দল যাকে ধানের শীষ প্রতীক দেবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। যাকে প্রার্থী করা হবে তাকে একটু বেশি সময় জিজ্ঞাসা করা হয় বলে জানা গেছে।

মনোনয়ন বোর্ডে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মামলাজনিত কারণে মনোনয়ন বোর্ডে থাকতে পারেননি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ ছাড়া পদাধিকারবলে সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন বোর্ডে ছিলেন। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়-১ আসনের প্রার্থীদের দিয়ে সাক্ষাৎকার শুরু হয়। এই আসনে তিনজন প্রার্থী সাক্ষাৎকার দেন। তারা হলেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, মো. তৌহিদুল ইসলাম ও মো. ইউনূস শেখ। এরপরই পঞ্চগড়-২ আসনে চারজন সাক্ষাৎকার দেন। তারা হলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ, হামিদুর রহমান, নাদিরা আক্তার ও মাহমুদ হোসেন সুমন। ঠাকুরগাঁও-১ আসনে শুধু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষাৎকার দেন। ঠাকুরগাঁও-২ আসনে সাক্ষাৎকার দেন ১০ জন। তারা হলেন— জাহিদুর রহমান, কামাল আনোয়ার আহম্মেদ, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সুকুমার রায়, আক্তারুজ্জামান চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মো. খেজমত আলী খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ, পারুল বেগম, জিয়াউদ্দিন জিয়া ও ব্যারিস্টার রুকনুজ্জামান। পঞ্চগড়-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদকে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রশ্ন করেন তারেক রহমান। তাকে বলা হয়, ‘কেন আপনাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ তখন ফরহাদ হোসেন আজাদ বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তার ছাত্ররাজনীতি, ওয়ান-ইলেভেনসহ পরবর্তী সময়ে আন্দোলনে অবদান, হামলা-মামলাসহ দলের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি তুলে ধরেন। শুধু তাকেই নয়, মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে একই ধরনের প্রশ্ন করা হয়।

রংপুর বিভাগের এক প্রার্থীকে মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, ‘এবার একটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভোট হচ্ছে। এখানে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে টিকে থাকতে হবে। ভোটের মাঠ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যারা নিজ নিজ এলাকায় বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে ভোটের মাঠে থাকতে পারবেন, ভোটারদের সঙ্গে থাকতে পারবেন, তাদেরই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ তিনি আরও বলে, প্রার্থীদের নার্ভ কতটা শক্ত, প্রার্থীর জন্য স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কতটা ত্যাগ শিকার করতে পারবেন, সেটা দেখা হচ্ছে।

নাটোর-২ আসনে সাক্ষাৎকার দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি বলেন, মনোনয়ন বোর্ডে যারা ছিলেন সবাই আমার সম্পর্কে জানেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরও ভালো জানেন। গণতন্ত্রের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। নাটোর-১ আসনে সাক্ষাৎকার দেন বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। নীলফামারী-৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বেবী নাজনীন বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী। তার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া।’ সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে সাক্ষাৎকার দেন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম। সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা সাক্ষাৎকার দিতে এসে বলেন, ‘আমার রাজনীতিতে আসার একটাই কারণ, আমি মানুষের সেবায় থাকতে চাই। রাজনীতির মাঠ থেকে আপামর জনগণের সেবা করা যায়।’

এদিকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সামনের ৮৬নং সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনো ধরনের যানবাহন পুলিশের তল্লাশি ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আজ শুরু হবে বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার। সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত এবং বেলা আড়াইটা থেকে শুরু হবে খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার। আগামীকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগের সাক্ষাৎকার হবে সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত এবং বিকাল আড়াইটা থেকে কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগের সাক্ষাৎকার শুরু হবে। বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত হবে ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের এবং বেলা আড়াইটা থেকে ঢাকা বিভাগের সাক্ষাৎকার।

সুত্র: বাংলাদেশপ্রতিদিন।

Print Friendly, PDF & Email