|

ভালুকায় স্বাধীনতার ৪৮বছরেও স্বীকৃতি পায়নি মুক্তিযোদ্ধা মাহাম্মদ আলী

প্রকাশিতঃ ৯:১১ অপরাহ্ণ | জুন ২৪, ২০১৯

মো. আসাদুজ্জামান সুমন, ভালুকার খবর: স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বরাইদ গ্রামের অসহায় মুক্তিযোদ্ধা মাহাম্মদ আলী । স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রোগে শোকে আক্রান্ত হয়ে এখন অনেকটাই ঘরবসে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও এখোনও স্মৃতি শক্তি লোপ পায়নি। দীর্ঘনিশ^াস ফেলে বললেন জীবনের ফেলে আসা অতীতের কথা। স্মৃতিচারণ করলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও এখন নিজের জীবনযুদ্ধে লড়ছি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ি। মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ট নেতৃত্বদানকারী বৃহত্তর ময়মনসিংহে ‘আফছার ব্যাটেলিয়ন’ গ্রুপের সক্রিয় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে পারেনি আজও।

মাহাম্মদ আলী আরও বলেন, ‘যোদ্ধকালিন সময়ে বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। ময়মনসিংহ সদর দক্ষিণ ও ঢাকা সদর উত্তর নিয়ে গঠিত হয় ১১নং সেক্টর। এর সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মরহুম মেজর আফছার উদ্দিন আহাম্মেদ। তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর নাম ছিল ‘আফছার ব্যাটেলিয়ন’। ওই টিমে যে কয়েকজন সেবাদানকারী যোদ্ধা ছিলেন তাদের মাঝে মাহাম্মদ আলী ছিলেন অন্যতম একজন। তিনি মুক্তিযোদ্ধের পাশাপাশি সহযোদ্ধাদের জন্য রান্নাবান্না করে দিতেন। সেই থেকে তিনি ‘মাহাম্মদ আলী বাবুর্চি’ নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর হাতেঘরা বাহিনী রক্ষী বাহিনীতে ৮/৪/৭১ইং তারিখ হতে ২৪/২/৭২ইং অবধি সিপাহি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি সহযোদ্ধাদের সাথে উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারগাড়া বাজারে মেজর আফছারের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। নিজের অজ্ঞতা ও নানবিধ সমস্যার কারণে মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র নেওয়া হয়ে উঠেনি তাঁর।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের কাছে সম্বল বলতে সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর আফছার উদ্দিন আমাম্মেদের দেওয়া রক্ষীবাহিনীর প্রশংসাপত্র ও সহযোদ্ধাদের সুপারিশকৃত কিছু কাগজপত্র রক্ষিত আছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘যৌবনে দেশ মাতৃকার টানে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ নিলেও ফেরাতে পারেনি নিজের ভাগ্য। অভাব অনটন আর দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে বর্তমানে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি । তিনি আরো বলেন, পাক বাহীনীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে এবং বাংলার মানুষ স্বাধীন ভাবে বাঁচার যে স্বপ্ন দেখেছিল সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা যুদ্ধ করেছি।

আক্ষেপ প্রকাশ করে মাহাম্মদ আলী আরোও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি। বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি’।
বঙ্গবন্ধু কণ্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন অসহায়-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা মাহাম্মদ আলী বাবুর্চি ও তার পরিবার।

স্থানীয় সমাজকর্মী আবু সাঈদ সরকার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় বীর ও দেশপ্রেমিকের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অনাহারে অধার্হারে থেকে বিনা চিকিৎসায়, বাসস্থানহীন অবস্থায় পরে থাকবে আর ভুয়ারা বুক ফুলিয়ে হাসবে, সুযোগ ভোগ করবে এটা আমরা মেনে নিতে পারিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার যথাযথ মূল্যায়ন করবেন বলে আশা করছি’।



Print Friendly, PDF & Email