ভালুকা আসনে এমপি‘র দৌড়ে মাঠে আছেন যারা
প্রকাশিতঃ ৯:১৯ অপরাহ্ণ | মে ০৬, ২০১৮

মো. আসাদুজ্জামান সুমন, ভালুকার খবর: দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভালুকা সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। এ সময় একাধিকবার প্রার্থী বদল করেও বিএনপি আসনটি দখল করতে পারেনি। একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে ভালুকা নির্বাচনী এলাকাটি ময়মনসিংহের ১১ নম্বর আসন।
বর্তমানে ভালুকা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোট দশটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে পাঁচবার। দুইবার বিএনপি, দুইবার মুসলিম লীগ ও একবার জাতীয় পার্টি নেতৃত্ব দিয়েছেন এখানে।
জাতীয় সংসদের ১৫৬ নম্বর নির্বাচনী এলাকা শিল্পসমৃদ্ধ ভালুকা আওয়ামী লীগের এলাকা হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরিচিত । কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে এখানে বিএনপিও রয়েছে শক্ত অবস্থানে। সাংগঠনিক বিবেচনায় দুই দলের অবস্থানগত পার্থক্য হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আছে চরম অন্তঃকোন্দল এবং বিএনপি রাজনীতি দীর্ঘদিন যাবৎ ২টি মেরুতে বিভক্ত। দেশের প্রধান দুটি দলের তৃণমূলের কর্মীদের প্রত্যাশা দলের স্বার্থে সবাই হাতে হাত রেখে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের নেতৃকে জাতীয় সংসদের ১৫৬ নম্বর নির্বাচনী আসনটি উপহার দিবে।
এ আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ এম আমান উল্লাহ। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ছাড়াও আরো এক ডজন নেতা ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
অন্যদিকে বাচ্চু-মোর্শেদ মেরুতে বিভক্ত ভালুকা বিএনপির মনোনয়ন দৌড়েও রয়েছেন মোট চার জন নেতা।
আওয়ামী লীগ
অধ্যাপক ডাঃ এম আমান উল্লাহ: বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এম আমান উল্লাহ ইতিপূর্বে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ভালুকার খবর‘কে বলেন, “আমি চারবার নির্বাচিত হয়ে এলাকায় গ্রামীণ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ভালুকাবাসী প্রতিবারই আমাকে আগেরবারের চাইতে বেশি ভোটে নির্বাচিত করেছে। আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবং জয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।”
আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা : এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ‘লীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা। তিনি ভালুকার খবর‘কে বলেন “আমি আমার এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন করেছি, এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহায়তা দেওয়া, বাল্যবিয়ে, মাদক প্রতিরোধসহ বিভিন্ন কাজ করে ময়মনসিংহ জেলায় শ্রেষ্ট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পুরুষ্কৃত হয়েছি”। আমাকে দল মনোনয়ন দিলে ভালুকাবাসী আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।
কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু: ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রার্থীদের তালিকায় আছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু। তিনি সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের ২বার আহবায়ক ও সভাপতি এবং যুবলীগের আহবায়ক ও সভাপতি ছিলেন। তিনি বলেন গত সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন তাঁকেই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে না আসায় পরে প্রার্থী পরিবর্তন করে দলের হাইকমান্ড। আমার পরিবারে ১৮জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলো। আমার বাবার নেতৃত্বে ভা্লুকা স্বাধীন হয়। জনমতের বিচারে ইনশাআল্লাহ আমিই মনোনয়ন পাবো।
অধ্যাপক ডা. কে বি এম হাদিউজ্জামান সেলিম: বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে বি এম হাদিউজ্জামান সেলিমও মনোনয়ন চান। তিনি বলেন, ‘এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করে মানবতার সেবা দিচ্ছি, উঠান বৈঠক করছি।’ মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো দল বিবেচনায় আনবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
মো. রফিকুল ইসলাম পিন্টু: যুবনেতা হিসেব আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশী ভালুকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. রফিকুল ইসলাম পিন্টু। তিনি সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও পরিশ্রমী যুবনেতা। ভালুকার খবর‘কে তিনি বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। সততার সাথে ভালুকা উপজেলা যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। মানুষের জন্য কাজ করছি। অসহায় মানুষের পাশে দাড়াচ্ছি। স্বচ্ছ কাজে মূল্যায়ন করলে ইনশাআল্লাহ আমিই মনোনয়ন পাব।’
মনিরা সুলতানা মনি : ভালুকায় একমাত্র নারী মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মুমিনুন্নেছা কলেজ ছাত্রী সংসদের সাবেক ভিপি মনিরা সুলতানা মনি। তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা মহিলা আওয়ামী যুবমহিলালীগের সাধারন সম্পাদক। তিনি বলেন, “ভালুকা আওয়ামী লীগের রাজনীতি, ভালুকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে যথেষ্ট অবদান রয়েছে আমার বাবা সাবকে এমপি মোস্তফা এম.এম মতিনের। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি”।
আলহাজ্ব এম এ ওয়াহেদ:
বিএনপি
ফখরউদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু: সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দলের উপজেলা শাখার সভাপতি ফখরউদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু। ২০০৮ সালে তিনি ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে জাতীয় নির্বাচন করেছিলেন। আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে সর্বোচ্চ জনপ্রিয় তিনি। ভালুকার খবরকে তিনি বলেন, “ দলের সভাপতি দায়িত্ব পাওয়ার পর ভালুকায় দলকে সুসংগঠিত করে ওয়ার্ড ভিত্তিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের শুরু করেছিলাম। ফলে বর্তমানে উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপির ব্যাপক সক্রিয় কর্মী রয়েছে। আমি দল থেকে মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো ইনশাআল্লাহ’’।
মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম: সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা ভালুকা বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমও দলের মনোনয়ন প্রার্থী। তিনি বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের নির্বাচিত মহাসচিব ছিলেন। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভালুকার ১০৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩টি কেন্দ্রে জয়লাভ করলেও বিতর্কিত ফলাফলে চার হাজার ভোটের ব্যবধানে আমাকে ফেল করানো হয়। দলীয় নেতাকর্মী ও তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই আমি। মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো মূল্যায়িত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি”।
বিএনপির অপর ২ সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা সাবেক ছাত্রদল ও বিএনপি নেতা আনোয়ার আজিজ টুটুল এবং কেন্দ্রীয় জিয়া ব্রিগেড সভাপতি ও জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য মো. আবুল হোসেন ।