ভয়ংকর রূপে ডেঙ্গু, আতংকিত দেশবাসী!
প্রকাশিতঃ ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ | আগস্ট ০৩, ২০১৯

জান্নাতুল মাওয়া : ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নিয়ে বর্ষাকালের আগমনের সাথে সাথে বাংলাদেশের সর্বত্র ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু জ্বর নতুন প্রজাতির ভাইরাস দ্বারা সংক্রমন হওয়ায় এটি মহামারী আকার ধারন করেছে। যার ফলে সর্বস্তরের জনসাধারন এখন ডেঙ্গুর আতংকে আতংকিত। কখন আবার কাকে এডিস মশার কামড় খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে ডে ঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এই পর্যন্ত প্রায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে। এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। শুধু হাসপাতালে না ঘরে বসে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যাও কম নয়। ডেঙ্গু মশার প্রজনন বন্ধে কতৃপক্ষ যেমন ব্যর্থ, তেমনি নগরবাসী ও অসহায়।
ডেঙ্গুর ভৌগলিক বিস্তার : ১৯৫০ সালে থাইল্যান্ডে ও ফিলিপাইনে ডেঙ্গু হিমোরেজিক জ্বর মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭০ সালের পূর্বে পৃথিবীর মাত্র ৯ টি দেশে ডেঙ্গু হিমোরেজিক জ্বরের প্রাদুর্ভাব ছিল। ২০০৮ সাল থেকে এই জ্বর আফ্রিকা,এশিয়া, ইউরোপ, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১০ সালে ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া ২০১২ সালে পর্তুগাল, ২০১৪ সালে চীন, মালেশিয়া, ২০১৫ সালে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপ পুঞ্জ, ২০১৬ সালে ব্রাজিল, ফিলিপাইন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু হিমোরেজিক জ্বর মহামারী আকারে পরিলক্ষিত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে প্রতি বছর পৃথিবীতে পাঁচ লক্ষ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরের কারনে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ২.৫ শতাংশ মৃত্যু পতিত হয়। বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের আক্রমন সনাক্ত হয় ২০০০ সালে। আইসিডিআর (Institution Of Epidmiology Disase Control & Research, Dhaka) এর গবেষনা অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৭৫ জন। যা ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ৬,০৬০ জন। সরকারী হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৭,৪৫০ জনের সন্ধান পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। তবে ২০১৯ সালে এসে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারন করেছে। মাত্র কয়েক মাসেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৬৯ জন বলে জানা যায়, যা পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে।
ডেঙ্গুর সংক্রমন : ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ। এডিস ইজিপ্টি (Aedes Aegypti) এবং এডিস এলবোপিকটাস (Aedes Albopictas) মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। এডিস মশা চিকনগুনিয়া এবং ইয়োলো ফিবার ভাইরাস ও বাহক। এডিস মশার গায়ের সাদাকালো ডোরা দাগ দেখেই একে চেনা যায়। এই মশা দিনের বেলায় আক্রমন করে। আর ভোররাতে ও সন্ধ্যাবেলায় আলো আধারের সময় আক্রমনের মাত্রা হয় সবচেয়ে বেশি। আক্রান্ত ব্যাক্তিকে স্ত্রী জাতীয় এডিস মশা কামড় দিলে তার শরীর থেকে মশার দেহে ভাইরাসযুক্ত রক্ত সংক্রমন হয় এবং সেই মশা অপির কোনো ব্যক্তিকে দংশন করলে ডেঙ্গু ভাইরাস সুস্থ ব্যাক্তির রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। মে-অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি থাকে। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টিতে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে।