মুখে দুর্গন্ধ!
প্রকাশিতঃ ১২:২০ অপরাহ্ণ | জুন ১১, ২০১৮

স্বাস্থ্য খবর : দুর্গন্ধ যদি মানুষের মুখ থেকে বের হয় তবে তা বড়ই অস্বস্থিকর ও বিব্রতকর। মানুষের ব্যক্তিত্বকে হেয় করে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকেও বিচ্ছিন করে। দাম্পত্য জীবনেও এর প্রভাব যথেষ্ট। তবে মজার ব্যাপার হলো, কথা বলাল সময় কিংবা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যার মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয় সে নিজে তা অনুভব করতে পারেনা। টের পায় তারাই যারা তার কাছাকাছি অবস্থান করে। একজন ধূমপায়ীর কাছে সিগারেটের বিশ্রী গন্ধ মোটেই অনুভব হয় না। কিন্তু একজন অধূমপায়ীর কাছে তা বড়ই বিব্রতকর অবস্থা । সুতরাং মুখে দুর্গন্ধ কারো জন্য সুখকর নয়। মুখ ও দাতের কিছু স্থানীয় সমস্যা অথবা অন্য কোনো শারীরিক মারাত্মক রোগের কারণেও অত্যন্ত সম্পর্শকাতর এ অবস্থাটি হতে পারে । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম হেলেটোসিস বা দূষিত নিঃশ্বাস। মুখের দূর্গন্ধের কারণঃ মুখের দুর্গন্ধের নানাবিধ কারণ রয়েছে। যথা সময়ে মুখ ও দাঁত পরিষ্কার না করলে খাদ্য কণা পচে যেমন দুর্গন্ধ হতে পারে। তেমনি কিছু কিছু রোগের কারণেও বায়বীয় পদার্থ যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথাইল মারকাপটেন, মিথাইল, (শেষ পাতার পর) সালফাইড, বা এসিটোন সৃষ্টির ফলে মুখে দূর্গন্ধ হতে পারে। তাছাড়া নি¤œলিখিত অবস্থাকে হেলিটোসিস এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ক) মুখগহ্বর নাক বা শ্বাসনালিতে দীর্ঘমেয়াদী সংক্রামণ খ) অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস গ) দীর্ঘমেয়েদী সাইনোসাইটিস ঘ) শ্বাসনালির ক্যান্সার ঙ) খাদ্য নালিন কিছু রোগ। চ) লিউকোমিয়া (রক্তের ক্যান্সার) ছ) লিভার পচন জ) মহিলাদের ঋতু¯্রাব। তবে হেলিটোসিস এর কারণে হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুখ ও দাতের নি¤েœাক্ত সমস্যা গুলো সনাক্ত করা হয়ে থাকে। কারণ মুখ ও দাত কতগুলো অবস্থার মধ্যে নিহিত থাকে বলে বিশেজ্ঞদের ধারণা:
ক) অপরিষ্কার মুখগহ্বর খ) মাড়ির ঘা জনিত প্রদাহ গ) পেরিওডেন্টাল ডিজিজ ঘ)ভিন এনজাইনা ঙ) পচা দন্ত মজ্জা চ) দাঁতের গর্তে আটকে থাকে খাদ্য কণা। ধুমপান, মদ্যপান, জ) মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া ঝ) জিহ্বার কিছু রোগ ঞ) মুখের লালা নিঃসরণ কমে যাওয়া। ট) জ্বর হওয়া ঠ) বৃদ্ধ বয়স। ড) সকালের নিঃশ্বাস ও ক্ষুদার্ত নিঃশ্বাস ইত্যাদি।
মুখের দুর্গন্ধ চিকিৎসা ও প্রতিকার:
মুখে দুর্গন্ধ হওয়ায় চিকিৎসায় যথার্থভাবে করতে হলে প্রয়োজনে চিকিৎসা যথার্থভাবে করতে হলে প্রয়োজন এর কারণ নির্ণয়। আর এ কাজটির জন্য দরকার রোগের ইতিহাস জানা । মুখ ও দাতের পরীক্ষণ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শারীরিক কোন সমস্যা চিহ্নিতকরণ। মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার জন্য কোনো রোগ এর জন্য দায়ী হতে পারে না। সে ক্ষেতে দেখা যায় মুখের মধ্যস্থিত কারণনেই এ জন্য দায়ী। অতএব এ ব্যাপারে মুখ ও দন্তরোগ বিশেজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করাই উত্তম।
পরামর্শ:
সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত সঠিক পদ্ধতিতে মুুখ ও দাঁত পরিষ্কার করা।
২। জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ দিয়ে নিয়মিত চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়াী কুলি করা।
৩। দাঁতের মাড়ি, জিহ্বা, কিংবা গলায় কোন ক্ষত থাকলে তা চিকিৎসা করানো।
৪। ধুমপান মধ্যপান পরিহার করা।
৫। ডায়বেটিকস থাকলে তা নিয়ন্ত্রন রাখা।
৬। দীর্ঘ মেয়াদী কাশি ও গলাব্যথা বুকব্যথা থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ।
৭। মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করা।
৮। বৃদ্ধ বয়সে মুখের লালা নিঃসরণ ঠিক রাখার জন্য মাঝে মাঝে টক লজেন্স খাওয়।
৯। দাঁতের ভাঙ্গা গোড়া থাকলে তা তুলে ফেলা এবং রোগাক্রান্ত দাঁতের চিকিৎসা করা।
১০। বৃদ্ধ বয়সে মুখের লালা নিঃসরণ ঠিক রাখার জন্য মাঝে মাঝে টক লজেন্স খাওয়া।
লেখক: ডা: এস.এম জাকারিয়া
বি ডি এস (ডি ইউ), পিজিটি (এন্ডোডন্টিকস)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হসপিটাল)
ডিপার্টমেন্ট অব ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জারী
পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।