|

গাভী কেনার টাকা নেই তারপরও দুধ কেনার পাত্রটা কিনলাম

প্রকাশিতঃ ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | জুন ২৭, ২০১৮

আনোয়ারা নীনা:

বিষয়টা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে লেখা।পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, দুধ আদর্শ খাদ্য ইত্যাদি অনেক কিছু আমরা জানি।এটা ও জানি দুধ গাভীই দেয়। কিন্তু আমার গাভী নেই বা গাভী কেনার টাকাও নেই অথচ আমি শিখেছি দুধ একটি আদর্শ খাদ্য। তাই দুধ কেনার পাত্রটা কিনলাম। তবে কি দুধ খাওয়া হবে? আদর্শ খাদ্য কি খাওয়া হবে? বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের ঠিক তাই হলো। সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি দিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিন্তু আদৌ কিসেই বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি রাখার বা ব্যাবহারের স্হান যেসব প্রতিষ্ঠানে দিয়েছেন তাদের আছে কিনা তা যাচাই করেন নি।বরং যন্ত্রপাতি দিয়ে আরো বিড়ম্বনার শিকার। কোথায় রাখা হবে এগুলো? কিন্তু গ্রহন করার সময় মনের আনন্দে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা গ্রহন করেছি।তারপর?

তারপর আর কি সে গুলো কনো ভবে কোন স্হানে রাখা ছাড়া আর উপায় কি? ফেলে দেয়া তো যাবেনা। সরকারী জিনিস হিসাব রাখতে হবে, দিতে হবে। কিন্তু কিভাবে রাখলাম সেটার মনে হয় আর জবাব দিতে হবেনা। বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ব্যবহারিক বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার জন্য। তবে পরিকল্পনাটাকে বাস্তবতার সাথে বেমানান। বিশেষতঃ বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারিক শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ন।এই বিজ্ঞান শিক্ষার্থদর বেশ কয়েকটি বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা, ক্লাস ইত্যাদি থাকে। কিন্তু আমরা কি আদৌ পারছি তাদের সেই বিজ্ঞান শিক্ষায় হাতে কলমে শিক্ষা দিতে? বিভাগীয় বা জেলায় অবস্হিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া এই ব্যবহারিক পরীক্ষা, বা ব্যবহারিক ক্লাস হচ্ছেনা।

বিষয়টি সরকারের নজরে আসলেও খুব সুনজরে আসেনি। বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতির আগে বিদ্যালয়ে ল্যাব নির্মান প্রয়োজন।একটি ল্যাব থাকলে অন্ততঃবিদ্যালয়ের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু যন্ত্রপাতি কিনে কিছুটা হলেও হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া যেত। তারপর ও জিজ্ঞাসা একজন শিক্ষার্থী যে তার ব্যবহারিকের পরো সিলেবাস শিখতে পারলো না, অর্ধশিক্ষিত হলো এর দায় ভার কে নেবে?

অথচ এই অর্ধ শিক্ষিত শিক্ষার্থীদের আমরা ২০০ নম্বরের মাঝে ১৯০ – ২০০নম্বর অনায়াসে দিয়ে দিচ্ছি।পরবর্তী জীবনে এই ব্যবহারিক শিক্ষা কি কাজে লাগবে আমার জানা নেই।বিশেষ করে যারা উপজেলা বা মফস্বল এলাকা থেকে পড়াশুনা করে শহরে যাচ্ছ বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য তারা যেন সরষে ফুল দেখা ছাড়া আর কিছু না।

আবার দেখা যায় যে একজন মানবিকে পড়া শিক্ষার্থীর ২০০নম্বরের ব্যবহারিক নেই কিন্তু বিজ্ঞানে পড়া শিক্ষার্থীর ২০০ নম্বরের ব্যবহারিক থাকায় ফলাফলে ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।অথচ মানবিকের শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেই তার পুরোটা ফলাফল অর্জন কিন্তু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কিন্তু ২০০ নম্বর এমনিতেই পেল।জানতে ও হলোনা শিখতে ও হলোনা। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিজ্ঞানের শিক্ষকের ভাল সম্পর্ক ক্লাসে তার এত ভাল পড়াশুনাও কখনো করেনি সে ব্যবহারিকে ২০০ তে নাম্বার পেল ২০০। আবার ক্লাসেরেগুলার উপস্হিত, পড়াশুনাতে ও ভাল সেখানে ঐ শিক্ষার্থীর সাথে খুব একটা ভাল সম্পর্ক নেই তাকে দেয়া হলো ১৮০/১৭০। তাতে ঐ শিক্ষকের নৈতিকতার অবক্ষয় হলো। তাছাড়া সেই শিক্ষার্থীর ফলাফলে বিপর্যয় ঘটলো।

ব্যাবহারিক পরীক্ষার জন্য একজন শিক্ষার্থী কে বাস্তব জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য ব্যাবহারিক খাতা আকতে হয়, লিখতে হয়।কিন্তু আদৌ কি সেই শিক্ষার্থী নিজে খাতায় একেছে বা লিখছে?

আমার প্রত্যক্ষ দেখা ময়মনসিংহ বিভাগের বড় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেইটের সামনে কম্পাজ করে লেখা “এখানে সুলভ মূল্যে অত্যন্ত নিপুন ভাবে ব্যাবহারিক খাতা করা হয়”।  বিষয় টা ভেবে দেখুন। কি আমাদের ব্যাবহারিক পরীক্ষা।ব্যাবহারিকের নম্বরটা কাকে দেয়া হবে ঐ শিক্ষার্থীকে নাকি ঐ ভদ্রজন কে? একজন বিজ্ঞানের ভাল শিক্ষক  ভাল স্কুলে, ভাল কলেজে পড়াশুনা করে মফস্বলের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। তার ঐ ভাল স্কুল বা কলেজ থেকে অর্জিত জ্ঞান কাকে দিবে? দেওয়ার মত স্হান কাল পাত্র কোথায়? আস্তে আস্তে নিজের জ্ঞান টুকু ও হারাতে হচ্ছে।এই দায়ভার কার?

আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে বড় বড় সমস্যাগুলো কে চিহ্নিত করতে হবে। কিছু কিছু সমস্যার সমাধান অচিরেই না হলে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিপর্যয় অনিবার্য। শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য নৈতিকতার বিকাশ।পক্ষান্তরে অনৈতিক শিক্ষা জাতির অধঃপতন নিশ্চিত।

লেখিকা: প্রধান শিক্ষিকা, হালিমুন্নেছা চৌধুরাণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। 

Print Friendly, PDF & Email