|

আজ জিততেই হবে বাংলাদেশকে

প্রকাশিতঃ ১২:১১ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট, ভালুকার খবর: অতীতের ভুল তারা কখনোই স্বীকার করে না। মানতে চায় না তাদের ব্যর্থতাগুলোও- তা যেমন ‘একাত্তর’ নিয়েও হয়েছে, তেমনি ‘দুই হাজার পনেরো’ নিয়েও হচ্ছে। তিন বছর আগে মিরপুরে টাইগারদের কাছে ৩-০ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল পাকিস্তান। তারপর আজ এই আবুধাবিতে ফের এই ফরম্যাটে মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। দুবাইয়ে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মিডিয়ারুমের বাইরে এ নিয়েও কথা হচ্ছিল লাহোর-ইসলামাবাদ থেকে আসা কিছু পাকিস্তানি সাংবাদিকের সঙ্গে। যাদের জোর চেষ্টা ছিল তিন বছর আগে পাকিস্তানের ওই ধবলধোলাই খাওয়া দলটির সঙ্গে এই দলের কোনো মিল নেই বলে একটা যুক্তি দাঁড় করানোর। তা অমিল তো আছে বাংলাদেশ দলেও অনেক। আজকের মোস্তাফিজের তখনও অভিষেক হয়নি! বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো টাইগারদেরই বা দেখেছে কবে তারা। ভারতের কাছে দুই ম্যাচ হেরে পাকিস্তানিদের মনোবল তলানিতে এসে ঠেকেছে, সেখানে আফগানদের হারিয়ে দু’দিনের বিশ্রাম নিয়ে বেশ তাজা দেখাচ্ছে মাশরাফিদের। আবুধাবিতে অঘোষিত ফাইনালে তাই আজ ফিটনেসের সঙ্গে স্নায়ুর লড়াইটাও হতে যাচ্ছে।

এমনিতে দলের মধ্যে এমনটা একটা ধারণা গেঁথে গেছে যে, পাকিস্তান দলটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। তারা যে কোনো দিন যে কোনো কিছু করতে পারে। তবে তাদের এই ‘যে কোনো কিছু’ যাতে না হয়, তার জন্য গতকাল বিকেলে টিম হোটেলে মিটিংয়ে বসেছিলেন মাশরাফি। কোচ স্টিভ রোডসও ছিলেন সেখানে। টিম মিটিংয়ে আজকের একাদশে কিছু পরিবর্তন আনার পক্ষে কথা হয়েছে। ওপেনিংয়ে নাজমুল হাসান শান্ত সেভাবে কিছু করতে পারছেন না। তাই তার জায়গায় সৌম্য সরকারকে খেলানোর একটা সম্ভাবনা থাকছে। এদিন সৌম্যকে অনুশীলনে নিয়ে এসে বোলিংও করিয়েছেন কোর্টনি ওয়ালশ। কারণ আজকের ম্যাচেও দুই পেসার মাশরাফি আর মুস্তাফিজই থাকছেন, প্রয়োজনে সৌম্য কয়েক ওভার মিডিয়াম পেসটা করে যেতে পার। যদিও সৌম্যর ফর্ম এখন চোখে পড়ছে না। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডে দেখায় সৌম্যর ১২৭ রানের ইনিংসটির কথা মনে আছে মাশরাফির। আজকের একাদশে এ একটি বদল হতে পারে। তবে আরেকটি খবরে সারাক্ষণ খোঁজ নিচ্ছেন মাশরাফি। সাকিবের আঙুল ফোলাটা গতকাল পর্যন্ত কমেনি। ব্যথাও ছিল বেশ। আজ সকাল পর্যন্ত তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি খেলার মতো পরিস্থিতি না থাকে তাহলে মুমিনুলকে দেখা যেতে পারে সেখানে।

দলের একাদশ সাজানোর পর প্রতিপক্ষর শক্তি-দুর্বলতা নিয়েও কিছু টেবিল ওয়ার্ক করেছেন কোচিং স্টাফরা। সেখানেই পাকিস্তানি টপঅর্ডার ইমাম-উল হক, ফখর জামান আর বাবর আজমের কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। কৌশলগত কারণেই সেটা মিডিয়ায় আসেনি। তবে প্রতিপক্ষ দলের একজনকে নিয়ে বিশেষ ভাবনা রয়েছে দলের। তিনি হলেন শোয়েব মালিক, এই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের হয়ে এখন পর্যন্ত তিনিই কেবল সফল। শোয়েব আর সরফরাজই হলো পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। বছর তিনেক আগে হোয়াইটওয়াশ হওয়া পাকিস্তান দলে ছিলেন সরফরাজ। শোয়েব মালিক সেবার না থাকলেও জানেন বাংলাদেশ দল কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো ম্যাচের আগে কাউকে ফেভারিট বা আন্ডারডগ তকমা দিতে পছন্দ করি না। এটা ঠিক যে আমাদের দল ভারতের কাছে পরপর দুটি হেরে কিছুটা ব্যাকফুটে আছে। আমদের কিছু পরিকল্পনায় পারিবর্তন আনতে হবে। একই সঙ্গে আমি এটাও বিশ্বাস করি, এই ছেলেগুলোই বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো খেলে আবারও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবে।’ এদিন কথাগুলো বলার সময় বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল শোয়েব মালিককে।

তিনি যে চেয়ারে বসে পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছিলেন, সেখানে তার কিছুক্ষণ আগেই বসেছিলেন বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস। ‘আমরা জানি, পাকিস্তান বেশ ভালো দল। বেশি দিন হয়নি তারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে এসেছে। তবে এটাও ঠিক, তারা আনপ্রেডিক্টেবল একটি দল। আমরা চাইব আমাদের বিপক্ষে তাদের একটি খারাপ দিন যাক।’ এই টুর্নামেন্টে আসার আগে থেকেই দলের চার পেসার নিয়ে পাকিস্তান কোচ মিকি আর্থার অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন। তবে তিনি যতটা বলেছেন ততটা কাজে আসেনি মোহাম্মদ আমের, উসমান খান, হাসান আলিরা। বাংলাদেশ কোচও এই জায়টায় পয়েন্ট আউট করেছেন। আবুধাবির পিচ দুবাইয়ের মতো নয়, ওখানে পিচ কিছুটা মন্থর। তাই পেসারদের তুলনায় স্পিনারদের সেখানে ভালো করা সম্ভব। শোয়েব মালিক বলেছেন বটে- এ মুহূর্তে আমেরের আত্মবিশ্বাসে কিছুটা ধাক্কা লেগেছে। তবে সে ফিরে আসার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। ঠিক এ জায়গাতেই আজ শুরু থেকেই আরও বড় ধাক্কা দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে। লিটন কিংবা সৌম্য ওপেনিংয়ে যেই থাকুক না কেন, পাকিস্তানি পেসারদের মাথা তুলতে দেওয়া হবে না। এর বাইরে পাকিস্তানিদের হাতে থাকছে লেগ স্পিনার শাদাব খান। যাকে নিয়ে ইমরুল কায়েস আগেই বলে দিয়েছেন- ‘রশিদ খানের চেয়ে তো আর ভালো লেগ স্পিনার এ মুহূর্তে নেই। তা ছাড়া শাদাব খানের বোলিং গ্রিপগুলো বোঝা যায়। তাই তাকে খেলতে আমাদের তেমন সমস্যা হবে না।’

ভেতরের থেকে আসা এ সাহসেই এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তান খানিকটা এগিয়ে থাকছে অন্য জায়গায়। আবুধাবির মাঠ, নিজেদের দেশে খেলতে না পারা দলটি গেল দশ বছর ধরে আমিরশাহিকে ঘরের মাঠ বানিয়েছে। আবুধাবি হচ্ছে তাদের জন্য ঢাকার বাইরের ‘চট্টগ্রাম’। সেখানকার পিচ, বাউন্ডারির মাপ- সবই চেনা সরফরাজদের কাছে। যে কথা শুনে মাশরাফির জবাব- ‘শুধু ফিট থাকতে দিন, গরমে যদি আমরা কাবু হয়ে না পড়ি তাহলে কেউ ঠেকাতে পারবে না…’। এ কথায় কে না তেতে ওঠে।

Print Friendly, PDF & Email