|

চাঁদে জমি নয় মনের সুখ কিনুন!

প্রকাশিতঃ ৭:৩৬ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১

মানিক মুনতাসিরঃ

বছর খানেক আগের কথা। আমার পরিচিত এক ধনীলোকের মেয়ের বার্থ ডে প্রোগ্রাম। আমি খুব হতভম্ব ছিলাম এই ভেবে যে কি গিফট দেয়া যায়। পরে আমার বড় ছেলেকে সাথে নিয়ে তুরাগ নদী থেকে ছোট ছোট কটা মাছের বাচ্চা ধরে একুরিয়ামে করে দিয়েছিলাম। দেশী মাছ। একুরিয়ামটাও ছিল নিজের তৈরি। বেশ ব্যতিক্রম ছিল উপহারটা।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মেয়েটির বাবা এমন একটি ঘোষণা দিলেন যার জন্য আমি বা আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না৷ বলা হল এখন একটি তারার নিবন্ধন সনদ উন্মুক্ত করা হবে। আমরা সবাই থমকে গেলাম। একটু পর একটি কার্টিছ পেপারের সনদ দেখিয়ে বলা হল- আমি আমার মেয়ের নামে আকাশের একটি তারা কিনেছি। বাবার পক্ষ থেকে এবার এটাই তার বার্থ ডে গিফট। আমেরিকান একটি সংস্থার কাথ থেকে। সেটার নিবন্ধন পত্র এটি। একটি নম্বরও দিয়েছে তারা। সেই তারাটা নাকি চাঁদ থেকে কয়েক মাইল দূরত্বে দেখাও যায়। মিটি মিটি করে জ্বলে৷ মহাকাশের ছবি বা নভোমন্ডলের ড্রয়িং এ সেটার নামকরণ, অবস্থান, আয়তন, সবই নাকি তাঁর মেয়ের নামেই বরাদ্দ করে দিয়েছে সেই মার্কিন সংস্থা। আমরা কিছুটা হতবাক, হতভম্ব ছিলাম কিছুটা সময়৷ তাতে উনার খরচ হয়েছিল প্রায় পাঁচ লাখ টাকা৷

মেয়েটির কখনো মন খারাপ হলে এখন মাঝে মাঝে তার নামে কেনা তারাটিকে দেখে মন ভাল করে। আহা! মানুষের কত শখ৷ কত প্রত্যাশা, কত উচ্চাকাঙ্খা। সম্ভব নয় বলে হয়তো এখনও কেউ দাবি করেনি যে গতকাল আমি মংগলে গিয়ে ডিনার করেছি। তবে সেদিন হয়তো দূরে নেই, যেদিন মানুষ মহাকাশে গিয়ে অফিস করবে। আবার চাঁদে গিয়ে হানিমুন করবে। সেকেন্ড হোমও গড়তে পারে।

পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে সম্রাট শাজাহান যা করেছিলেন সেটা নিশ্চয়ই সে সময় ছিল কল্পনাতীত ব্যাপার৷ তারপরও তিনি তা সম্ভব করেছিলেন তাজমহল বানিয়ে। ফলে এই যুগে এসে এত এত অত্যাধুনিকতার যুগে চাঁদে জমি কেনাটা আজগুবি এমন বিশ্বাস করাটা কঠিনও বটে। তবে হ্যাঁ ব্যাপারটা আজগুবিই।

চাঁদে অবতরণকারী মার্কিন নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন, মাইকেল কলিন্স, এডুইন অলড্রিন, কিংবা ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভারা এখন হয়তো ভাবছেন যখন তারা গিয়েছিলেন তখন কেন কিছু জমি নিজেদের নামে লিখে আনেননি। হয়তো আফসোসও করছেন এদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন।

ইতিহাস বলছে, ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে প্রথম চাঁদে গিয়ে যখন নেমেছিলেন মার্কিন নভোচারীরা, সেই ঘটনা বিশ্বজুড়ে দেখেছেন কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু পৃথিবীতে এখনো এমন বহু মানুষ আছেন, যারা বিশ্বাস করেন, মানুষ আসলে কোনদিনই চাঁদে যায়নি। ব্যাপারটা ছিল পুরাই ধাপ্পাবাজি এমন অভিযোগও করেছেন অনেকেই।

অবশ্য মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জরিপ চালিয়েছে। তাদের জরিপে সব সময় দেখা গেছে, চাঁদে মানুষ যাওয়ার ব্যাপারটিকে সাজানো ঘটনা বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় পাঁচ শতাংশ মানুষ।

গত দুদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় চাঁদে জমি কিনে বউকে উপহার দেয়ার একটা খবর ভাসছে। যদিও এটাতে আমার তেমন কোন আগ্রহ নেই৷ তবে ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ। ঐ তারকা কেনার মতই ব্যাপার। এরপর যদি কেউ কোথাও থেকে দলিল বানিয়ে এনে বলে পুরো পৃথিবীই আমার তাতেও হয়তো অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷ কারণ টাকা উপার্জনের জন্য মানুষ পারে না এমন কোন কাজ হয়তো নেই।

বর্তমানে বাংলাদেশে ই- কমার্স কোম্পানিগুলোর চটকদার অফার তো চাঁদে জমি কেনার মতই অনেকটা।

তাই এবার ভাবছি, আমি একটা দোকান খুলব। যেখানে চাঁদের জমি বিক্রি করা হবে। সকল কপোত কপোতী, প্রিমেক-প্রেমিকা, নতুন -পুরান কাপল সবাই সাশ্রয়ী রেটে চাঁদের জমি কিনতে পারবেন। তাই নাসার সাথে যোগাযোগ করে একটা শাখা অফিস খুলবো। তারপর আংগুল ফুলে কলাগাছ হব। আমার অবশ্য ডান হাতের রিংচংগা

আংগুলটা কদিন ধরে প্রচন্ড ব্যথা। ফুলেও গেছে। আমার ভাবনাগুলো কাল্পনিক হলেও লেখার ঘটনা কিন্তু সত্য। ফলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো কাল্পনিক সব অফার দিলেও বাস্তবে তারা জনগনকে বিরাট বোকা মনে করে। অবশ্য মানুষ তো সত্যিই বোকা। অফারের ধোঁকা কিংবা লোভের বসবর্তী হয়ে মানুষ অন্ধ, বধির, হিতাহিত বোধহীন হয়ে ধরা খায় বার বার৷

শেষ কথা, পৃথিবীতে এক দল মানুষ আছে যারা ডেইলি স্লিপিং খেয়েও ঘুমাতে পারেন না৷ আর বেশিরভাগ মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমায় যাদের চাহিদা কম৷ কারণ সুখ হল মন আর দেহের সম্মিলিত একটা ব্যাপার। কোটি টাকা খরচ করে চাঁদে জমি কেনা যায়। কিন্তু সুখ শান্তি কেনা যায় না৷ মন আর দেহে শান্তি থাকলে ইট মাথায় দিয়েও টানা আট ঘন্টা ঘুমানো যায়।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Print Friendly, PDF & Email